পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

প্রজাপতির নির্বন্ধ २8 ● শৈল। মুখুজ্যেমশায়, ও কাগজের গোলাটা কিসের ? . . . " অক্ষয় তোমাদের সেই সভ্য হবার আবেদনপত্র এবং প্রবেশিকার দশ টাকার নোট পকেটে ছিল, ধোব বেটা কেচে এমনি পরিষ্কার করে দিয়েছে, একটা অক্ষরও দেখতে পাচ্ছিনে। ও বেটা বোধ হয় স্ত্রীস্বাধীনতার ঘোরতর বিরোধী, তাই তোমার ওই পত্রটা একেৰারে আগাগোড়া সংশোধন করে দিয়েছে। _ শৈল। এই বুঝি ! অক্ষয় । চারটিতে মিলে স্মরণশক্তি জুড়ে বসে আছে, আর কিছু কি মনে রাখতে দিলে ? -- সকলি ভুলেছে ভোলা মন + ভোলেনি ভোলেনি শুধু ঐ চক্ৰানন । ১০ নম্বর মধুমিস্ত্রির গলিতে একতলার একটি ঘরে চিরকুমার-সভার অধিবেশন হয়। বাড়িটি সভাপতি চন্দ্রমাধববাবুর বাস। তিনি লোকটি ব্রাহ্ম কলেজের অধ্যাপক। দেশের কাজে অত্যন্ত উৎসাহী ; মাতৃভূমির উন্নতির জন্ত ক্রমাগতই নানা মৎলব তাহার মাথায় আসিতেছে। শরীরটি কৃশ কিন্তু কঠিন, মাথাটা মস্ত, বড়ো দুইটি চোখ অন্যমনস্ক খেয়ালে পরিপূর্ণ। প্রথমটা সভায় সভ্য অনেকগুলি ছিল। সম্প্রতি সভাপতি বাদে তিনটিতে আসিয়া ঠেকিয়াছে। মূখভ্রষ্টগণ বিবাহ করিয়া গৃহী হইয়া রোজগারে প্রবৃত্ত। এখন তাহারা কোনোপ্রকার চাদার খাতা দেখিলেই প্রথমে হাসিয়া উড়াইয়া দেন, তাহাতেও খাতাধারী টিকিয়া থাকিবার লক্ষণ প্রকাশ করিলে গালি দিতে আরম্ভ করেন। নিজেদের দৃষ্টাস্ত স্মরণ করিয়া দেশহিতৈষীর প্রতি র্তাহীদের অত্যন্ত অবজ্ঞা জন্মিয়াছে । * বিপিন ঐশ এবং পূর্ণ তিনটি সভ্য কলেজে পড়িতেছে, এখনও সংসারে করে নাই। বিপিন ফুটবল খেলে, তাহার শরীরে অসামান্ত বল, পড়াশুনা কখন করে কেহ বুঝিতে পারেন, অথচ চট্‌পটু একজামিন পাস করে। ঐশ বড়োমানুষের ছেলে, স্বাস্থ্য তেমন ভালো নয়, তাই বাপ-ম পড়াশুনার দিকে তত বেশি উত্তেজনা করেন না —ঐশ নিজের খেয়াল লইয়া থাকে। বিপিন এবং প্রশের বন্ধুত্ব অবিচ্ছেন্ত। পূর্ণ গৌরবর্ণ, একহারা, লঘুগামী, ক্ষিপ্রকারী, ক্রতভাষী, সকল বিষয়ে গাঢ় মনোযোগ, চেহারা দেখিয়া মনে হয় দৃঢসংকল্প কাজের লোক । সে ছিল চন্দ্রমাধববাবুর ছাত্র। ভালোরূপ পাস করিয়া ওকালতি-স্বারা কুচারুরূপ জীবিকা নির্বাহ করিবার প্রত্যাশায় সে রাত জাগিয়া পড়া করে। দেশের কাজ লইয়া নিজের কাজ নষ্ট করা তাহার সংকল্পের মধ্যে ছিল না। চিরকৌমার্ধ তাহার