পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و 6 ج বলিলেন, "সত্যি বলছি শৈল, তুমি যদি আমার খালী না হয়ে আমার ছোটাে ভাই হতে তা হলেও আমি আপত্তি করতুম না।” শৈল ঈষৎ বিচলিত হইয়া কহিল, “আমিও করতুম না মুখুজোমশায়।” বাস্তবিক ইহারা দুই ভাইয়ের মতোই ছিল। কেবল সেই ভ্রাতৃভাবের সহিত কৌতুকময় বয়স্তভাব মিশ্রিত হইয়া কোমল সম্বন্ধ উজ্জল হইয়া উঠিয়াছিল। " পুরবালা শৈলকে বুকের কাছে টানিয়া কহিল, “এই বেশে তুই কুমারসভার সভ্য হতে ষাচ্ছিস ?” শৈল। অন্ত বেশে হতে গেলে যে ব্যাকরণের দোষ হয় দিদি ! কী বল রসিকদাদ । রসিক। তা তো বটেই, ব্যাকরণ বঁচিয়ে তো চলতেই হবে । ভগবান পাণিনি বোপদেব এরা কী জন্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ? কিন্তু ভাই শ্ৰীমতী শৈলবালার উত্তর চাপকান প্রত্যয় করলেই কি ব্যাকরণ রক্ষে হয়। অক্ষয়। নতুন মুগ্ধবোধে তাই লেখে। আমি লিখে পড়ে দিতে পারি, চিরকুমারসভার মুগ্ধদের কাছে শৈল যেমন প্রত্যয় করাবে তারা তেমনি প্রত্যয় যাবেন। কুমারদের ধাতু আমি জানি কি না। পুরবালা একটুখানি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া শৈলকে কহিলেন, “তোর মুখুজ্যেমশায়কে আর এই বুড়ো সমবয়সীটিকে নিয়ে তোর খেলা তুই আরম্ভ কর— আমি মার সঙ্গে কাশী চললুম।” পুরবালা এই সকল নিয়মবিরুদ্ধ ব্যাপার মনে মনে পছন্দ করিত না। কিন্তু তাহার স্বামীর ও ভগিনীটির বিচিত্র কৌতুকলীলায় সর্বদা বাধা দিতেও তাহার মন সরিত না। নিজের স্বামিসৌভাগ্যের কথা স্মরণ করিয়া বিধবা বোনটির প্রতি তাহার করুণা ও প্রশ্রয়ের অস্ত ছিল না। ভাবিত, হতভাগিনী যেমন করিয়া ভুলিয়া থাকে থাক্ । পুরবালা জিনিসপত্র গুছাইতে গেল। এমন সময় নৃপবালা ও নীরবালা ঘরে প্রবেশ করিয়াই পলায়নোস্থ্যত হইল। নীর দরজার আড়াল হইতে আর-এক বার ভালো করিয়া তাকাইয়া “মেজদিদি বলিয়া ছুটিয়া আসিল । কহিল, “মেজদিদি, তোমাকে ভাই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ওই চাপকানে বাধছে। মনে হচ্ছে তুমি যেন কোন রূপকথার রাজপুত্ৰ, তেপান্তর-মাঠ পেরিয়ে আমাদের উদ্ধার করতে এসেছ ।” নীরর সমুচ্চ কণ্ঠস্বরে আশ্বস্ত হইয়া নৃপও ঘরে প্রবেশ করিয়া মুগুনেত্ৰে চাহিয়া রহিল। নীর তাহাকে টানিয়া লইয়া কহিল, “আমন করে লোভীর মতো তাকিয়ে