পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&ፃ• রবীন্দ্র-রচনাবলী কহিলেন, “নির্মল, এক সময়ে তো বিবাহ করে তোমাকে সংসারের কাজে প্রবৃত্ত হতে হবে— চিরকুমার-সভার কাজ—” “বিবাহ আমি করব না।” “তবে কী করবে বলে ।” “দেশের কাজে তোমার সাহায্য করব।” “আমরা তো সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়েছি।” “ভারতবর্ষে কি কেউ কখনো সন্ন্যাসিনী হয় নি ?” চন্দ্রমাধববাবু স্তম্ভিত হইয়া হারানো বোতামটার কথা একেবারে ভুলিয়া গেলেন। নিরুত্তর হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । উৎসাহদীপ্তিতে মুখ আরক্তিম করিয়া নির্মলা কহিল, "মামা, যদি কোনো মেয়ে তোমাদের ব্রত গ্রহণের জন্যে অস্তরের সঙ্গে প্রস্তুত হয় তবে প্রকাশ্যভাবে তোমাদের সভার মধ্যে কেন তাকে গ্রহণ করবে না ? আমি তোমাদের কৌমাৰ্যসভার কেন সভ্য না হব ?” নিষ্কলুষচিত্ত চন্দ্রমাধবের কাছে ইহার কোনো উত্তর ছিল না। তবু দ্বিধাকুষ্ঠিতভাবে বলিতে লাগিলেন, “অন্ত র্যারা সভ্য আছেন—” নির্মলা কথা শেষ না হইতেই বলিয়া উঠিল, “যারা সভ্য আছেন, যারা ভারতবর্ষের হিতব্ৰত নেবেন, যারা সন্ন্যাসী হতে যাচ্ছেন— তারা কি একজন ব্রতধারিণী স্ত্রীলোককে অসংকোচে নিজের দলে গ্রহণ করতে পারবেন না ? তা যদি হয় তা হলে তারা গৃহী হয়ে ঘরে রুদ্ধ থাকুন, তাদের দ্বারা কোনো কাজ হবে না।” চন্দ্রমাধববাবু চুলগুলার মধ্যে ঘন ঘন পাচ আঙল চালাইয়া অত্যন্ত উস্কোখন্ধেী করিয়া তুলিলেন। এমন সময় হঠাৎ তাহার আস্তিনের ভিতর হইতে হারানো বোতামটা মাটিতে পড়িয়া গেল ; নির্মল হাসিতে হাসিতে কুড়াইয়া লইয়া চন্দ্রমাধবাবুর কামিজের গলায় লাগাইয়া দিল— চন্দ্রমাধববাবু তাহার কোনো খবর লইলেন না— চুলের মধ্যে অঙ্গুলি চালনা করিতে করিতে মস্তিষ্ককুলায়ের চিন্তাগুলিকে বিত্রত করিতে লাগিলেন। চাকর আসিয়া খবর দিল, পূর্ণবাৰু আসিয়াছেন। নির্মলা ঘর হইতে চলিয়া গেলে তিনি প্রবেশ করিলেন। কহিলেন, “চন্দ্রবাবু, সে কথাটা কি ভেবে দেখলেন ? আমাদের সভাটিকে স্থানান্তর করা আমার বিবেচনায় ভালো হচ্ছে না।” 町 চন্দ্র। আজ আর একটি কথা উঠেছে, সেটা পূৰ্ণবাৰু তোমার সঙ্গে ভালো করে আলোচনা করতে ইচ্ছা করি। আমার একটি ভাগ্নী আছেন বোধ হয় জানো 7 | পূর্ণ। (নিরীহভাবে ) আপনার ভারী ?