পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রজাপতির নির্বন্ধ ২৭৩ অসহিষ্ণু ঐশ কহিল, “স্পষ্ট নিষেধ না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের সভার যে-সকল উদ্দেশ্য তা স্ত্রীলোকের দ্বারা সাধিত হবার নয়।” কুমারসভায় স্ত্রীলোক সভ্য লইবার জন্ত বিপিনের ষে বিশেষ উৎসাহ ছিল তাহ নয়, কিন্তু তাহার মানসপ্রকৃতির মধ্যে একটা স্বাভাবিক সংযম থাকায় কোনো শ্রেণীবিশেষের বিরুদ্ধে এক-দিক-ঘেঁষা কথা সে সহিতে পারিত না। তাই সে বলিয়া উঠিল, “আমাদের সভার উদ্দেশু সংকীর্ণ নয়, এবং বৃহৎ উদ্দেশু সাধন করতে গেলে বিচিত্র শ্রেণীর ও বিচিত্র শক্তির লোকের বিচিত্র চেষ্টায় প্রবৃত্ত হওয়া চাই। স্বদেশের হিতসাধন এক জন স্ত্রীলোক যেরকম পারবেন তুমি সেরকম পারবে না এবং তুমি যেরকম পারবে একজন স্ত্রীলোক সেরকম পারবেন না— অতএব সভার উদ্ধেশুকে সর্বাঙ্গসম্পূর্ণভাবে সাধন করতে গেলে তোমারও যেমন দরকার স্ত্রীসত্যেরও তেমনি দরকার ।” লেশমাত্র উত্তেজনা প্রকাশ না করিয়া বিপিন শাস্তগম্ভীরস্বরে বলিয়া গেল— কিন্তু শ্ৰীশ কিছু উত্তপ্ত হইয়া বলিল, “যারা কাজ করতে চায় না তারাই উদ্দেশুকে ফলাও করে তোলে। যথার্থ কাজ করতে গেলেই লক্ষকে সীমাবদ্ধ করতে হয়। আমাদের সভার উদ্দেশুকে যত বৃহং মনে করে তুমি বেশ নিশ্চিস্ত আছ আমি তত বৃহৎ মনে করি নে ৷” বিপিন শাস্তমুখে কহিল, “আমাদের সভার কার্ধক্ষেত্র অন্তত এতটা বৃহৎ যে, তোমাকে গ্রহণ করেছে বলে আমাকে পরিত্যাগ করতে হয় নি এবং আমাকে গ্রহণ করেছে বলে তোমাকে পরিত্যাগ করতে হয় নি। তোমার-আমার উভয়েরই যদি এ স্থানে স্থান হয়ে থাকে, আমাদের দুজনেরই যদি এখানে উপযোগিতা ও আবশ্যকতা থাকে, তা হলে আরো এক জন ভিন্ন প্রকৃতির লোকের এখানে স্থান হওয়া এমন কী কঠিন ?” ঐশ চটিয়া কহিল, “উদারতা অতি উত্তম জিনিস, সে অামি নীতিশাস্ত্রে পড়েছি । আমি তোমার সেই উদারতাকে নষ্ট করতে চাই নে, বিভক্ত করতে চাই মাত্র। স্ত্রীলোকেরা যে কাজ করতে পারেন তার জন্তে তারা স্বতন্ত্র সভা করুন, আমরা তার সভ্য হবার প্রার্থী হব না, এবং আমাদের সভাও আমাদেরই থাকৃ। নইলে আমরা পরম্পরের কাজের বাধা হব মাত্র। মাথাটা চিন্তা করে। মরুক, উদরটা পরিপাক বিপিন। কিন্তু তাই বলে মাখাটা ছিন্ন করে এক জায়গায় এবং পাকষত্রটাকে আর-এক জায়গায় রাখলেও কাজের জুবিধা হয় না। i