পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী مbyئ)®ه নিখিলগুহিণীর রান্নাঘর কোথায়,টেকিশাল কোথায়, কোন ভাওরের স্তরে স্তরে ইহার বিচিত্র আকারের ভাও সাজানো রহিয়াছে ? ইহার দক্ষিণহস্তের হাতাবেড়িগুলিকে আভরণ বলিয়া ভ্রম হয়, ইহার কাজকে লীলার মতো মনে হয়, ইহার চলাকে নৃত্য এবং চেষ্টাকে ঔদাসীন্তের মতো জ্ঞান হয়। ঘূর্ণ্যমান চক্রগুলিকে নিয়ে গোপন করিয়া, স্থিতিকেই গতির উর্ধের্ব রাখিয়া, প্রকৃতি আপনাকে নিত্যকাল প্রকাশমান রাখিয়াছে – উর্ধ্বশ্বাস কর্মের বেগে নিজেকে অস্পষ্ট এবং সঙ্কীয়মান কর্মের কূপে/ নিজেকে আচ্ছন্ন করে নাই। | এই কর্মের চতুর্দিকে অবকাশ, এই চাঞ্চলকে এবশাস্তির দ্বারা মণ্ডিত কী বা রাখা, প্রকৃতির চিরনবীনতার ইহাই রহস্ত। কেবল নবীনতা নহে, ইহাই তাহার বল । ভারতবতার তথতা আকাশের নিকট, তাহার শুরু করে প্রারের নিকট তাহার জলজটামণ্ডিত বিরাট মধ্যাঙ্কের নিকট, তাহার নিকষকৃষ্ণ নিঃশব্দ রাত্রির নিকট হইতে, এই উদার শাস্তি, এই বিশাল স্তব্ধতা আপনার অন্তঃকরণের মধ্যে লাভ করিয়াছে। ভারতবর্ষ কর্মের ক্রীতদাস নহে । - সকল জাতির স্বভাবগত আদর্শ এক নয়— তাহা লইয়া ক্ষোভ করিবার দেখি না। ভারতবর্ষ মানুষকে লঙ্ঘন করিয়া কর্মকে বড়ো করিয়া তোলে নাই। ফলকাঙ্ক্ষাহীন কর্মকে মাহাত্ম্য দিয়া সে বস্তুত কর্মকে সংযত করিয়া লইয়াছে। ফলের আকাঙ্ক্ষা উপড়াইয়া ফেলিলে কর্মের বিষদাত ভাড়িয়া ফেলা হয়। এই উপায়ে মাছুষ কর্মের উপরেও নিজেকে জাগ্রত করিবার অবকাশ পায়। হওয়াই আমাদের দেশের চরম লক্ষ্য, করা উপলক্ষ্যমাত্র । বিদেশের সংঘাতে ভারতবর্ষের এই প্রাচীন স্তৰত ক্ষুব্ধ হইয়াছে। তাহাতে ৰে আমাদের বলবৃদ্ধি হইতেছে, এ কথা আমি মনে করি না । ইহাতে আমাদের শক্তিক্ষয় হইতেছে। ইহাতে প্রতিদিন আমাদের নিষ্ঠ বিচলিত, আমাদের চরিত্র ভগ্নবিকীর্ণ আমাদের চিত্ত বিক্ষিপ্ত এবং আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হইতেছে। পূর্বে ভারতবর্ষের কার্ধপ্রণালী অতি সহজ সরল, অতি প্রশাস্ত, অথচ অত্যন্ত দৃঢ় ছিল। তাছাতে আড়ম্বরমাত্রেরই অভাব ছিল, তাহাতে শক্তির অনাবশুক অপব্যয় ছিল না। সতী স্ত্রী অনায়াসেই স্বামীর চিতায় আরোহণ করিত, সৈনিক-সিপাহি অকাতরেই চান! চিৰাইয়া লড়াই করিতে যাইত। আচাররক্ষার জন্য সকল অস্থবিধা বহন করা, সমাজরক্ষার জন্ত চূড়ান্ত দুখ ভোগ করা এবং ধর্মরক্ষার জন্ত প্রাণবিসর্জন করা তখন অত্যন্ত সহজ ছিল। নিস্তব্ধতার এই ভীষণ শক্তি ভারতবর্ষের মধ্যে এখনো লঙ্কিত হুইয়া আছে ; আমরা নিজেই ইহাকে জানি না। দারিত্র্যের ৰে কঠিন বল, মেনের মে তৃতি আবেগ, নিষ্ঠায় ।