পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీసెతి রবীন্দ্র-রচনাবলী বৈষ্ঠেরা তো উপবীত গ্রহণ করিয়াছেন। মাঝে মাঝে কায়ন্থের বলিতেছেন তাহারা ক্ষত্রিয়, বণিকেরা বলিতেছেন তাহারা বৈশু— এ কথা অবিশ্বাস করিবার কোনো কারণ দেখি না। জাকারপ্রকার বুদ্ধি ও ক্ষমতা, অর্থাৎ আর্বত্বের লক্ষণে, বর্তমান ব্রাহ্মণের সহিত ইহাজের প্রভেদ নাই। বঙ্গদেশের যে-কোনো সভায় পইত না দেখিলে, ব্রাহ্মণের সহিত কায়স্থ স্ববর্ণবণিক প্রভৃতিদের তফাত করা অসম্ভব। কিন্তু যথার্থ অনার্য অর্থাৎ ভারতবর্ষীয় বস্তজাতির সহিত র্তাহীদের তফাত করা সহজ । বিশুদ্ধ জার্ষরক্তের সহিত অনাৰ্ষরক্তের মিশ্রণ হইয়াছে, তাহ আমাদের বর্ণে আকৃতিতে ধর্মে আচারে ও মানসিক দুর্বলতায় স্পষ্ট বুঝা যায়–কিন্তু সে মিশ্রণ ব্রাহ্মণ ক্ষত্ৰিয় বৈশু সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই রহিয়াছে। তথাপি এই মিশ্রণ এবং বৌদ্ধযুগের সামাজিক অরাজকতার পরেও সমাজ ব্রাহ্মণকে একটা বিশেষ গণ্ডি দিয়া রাখিয়াছে। কারণ, আমাদের সমাজের যেরূপ গঠন, তাহাতে ব্রাহ্মণকে নহিলে তাহার সকল দিকেই বাধে, আত্মরক্ষার জন্য যেমনতেমন করিয়া ব্রাহ্মণকে সংগ্ৰহ করিয়া রাখা চাই । আধুনিক ইতিহাসে এমনও দেখা যায়, কোনো কোনো স্থানে বিশেষ-প্রয়োজন-বশত রাজা পইতা দিয়া এক দল ব্রাহ্মণ তৈরি করিয়াও লইয়াছেন। বাংলাদেশে যখন ব্রাহ্মণের আচারে ব্যবহারে বিষ্ঠাবুদ্ধিতে ব্রাহ্মণৰ হারাইয়াছিলেন তখন রাজা বিদেশ হইতে ব্রাহ্মণ আনাইয়া সমাজের কাজ চালাইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এই ব্রাহ্মণ যখন চারি দিকের প্রভাবে নত হইয়া পড়িতেছিল তখন রাজা রুত্রিম উপায়ে কৌলীন্ত স্থাপন করিয়া ব্রাহ্মণের নির্বাণোন্মুখ মর্যাদাকে খোচা দিয়া জাগাইতেছিলেন। অপর পক্ষে, কৌলীতে বিবাহসম্বন্ধে যেরূপ বর্বরতার স্বাক্ট করিল তাহাতে এই কৌলীন্তই বর্ণমিশ্রণের এক গোপন উপায় হইয়া উঠিয়াছিল। যাহাই হউক, শাস্ত্রবিহিত ক্রিয়াকর্ম রক্ষার জন্য, বিশেষ আশ্বশুকতাবশতই, সমাজ বিশেষ চেষ্টায় ব্রাহ্মণকে স্বতন্ত্রভাবে নির্দিষ্ট করিয়া রাখিতে বাধ্য হইয়াছিল। ক্ষত্রিয়বৈশুদিগকে সেরূপ বিশেষভাবে তাহদের পূর্বতন আচারকাঠিন্তের মধ্যে বদ্ধ করিবার কোনো অত্যাবশ্বকতা বাংলাসমাজে ছিল না। ষে খুশি যুদ্ধ করুক, বাণিজ্য করুক, তাহাতে সমাজের বিশেষ কিছু আসিত বাইত না— এবং বাহার যুদ্ধ বাণিজ্য কৰি শিল্পে নিযুক্ত থাকিবে তাহাদিগকে বিশেষ চিহের দ্বারা পৃথক করিবার কিছুমান্ত্র প্রয়োজন ছিল না। ব্যবসায় লোকে নিজের গরজেই করে, কোনো বিশেষ ব্যবস্থার অপেক্ষ রাখে না— ধর্মসম্বন্ধে সে বিধি নহে ; তাহ প্রাচীন নিয়মে জীবন্ধ, তাহার আয়োজন রীতিপদ্ধতি অামাদের স্বেচ্ছাবিহিত নহে।