পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্যর্থ করিতে পারে, কিন্তু মুখে সন্তোষে মানুষকে ক্ষুদ্র করে। চীন বলিতেছে, আমি বাহিরের কিছুতেই দৃকপাত করি নাই ; নিজের এলাকার মধ্যে নিজের সমস্ত চেষ্টাকে বদ্ধ করিয়া সুখী হইয়াছি। কিন্তু এ কথা যথেষ্ট নহে। এই সংকীর্ণতাটুকুর মধ্যে সকল উৎকর্ষ লাভ করাকেই চরম মনে করিলে হতাশ হইতে হয় । জলধারা যদি সমুদ্রকে চায়, তবে নিজেকে দুই তটের মধ্যে সংহত সংষত করিয়া তাহাকে চলিতে হয়, কিন্তু তাই বলিয়া নিজেকে এক জায়গায় আনিয়া বদ্ধ করিলে চলে না। মুক্তির জন্যই তাহাকে সংযত হইতে হয়, কিন্তু নিজেকে বন্দী করিলে তাহার চরম উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়— তাহ হইলে নদীকে বিল হইতে হয় এবং স্রোতের অন্তহীন ধারাকে সমুদ্রের অস্তহীন তৃপ্তির মধ্যে লইয়া যাওয়া হয় না। ভারতবর্ষ সমাজকে সংযত সরল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহ সমাজের মধ্যেই আবদ্ধ হইবার জন্য নহে। নিজেকে শতধাবিভক্ত অন্ধ চেষ্টার মধ্যে বিক্ষিপ্ত না করিয়া, সে আপন সংহত শক্তিকে অনস্তের অভিমুখে একাগ্র করিবার জন্তই ইচ্ছাপূর্বক বাহবিষয়ে সংকীর্ণতা আশ্রয় করিয়াছিল। নদীর তটবন্ধনের স্তায় সমাজবন্ধন তাহাকে বেগদান করিবে, বন্দী করিবে না, এই তাহার উদ্দেশ্য ছিল। এইজন্ত ভারতবর্ষের সমস্ত ক্রিয়াকর্মের মধ্যে, মুখশাস্তিসস্তোষের মধ্যে মুক্তির আহবান আছে– আত্মাকে ভূমানন্দে ব্রহ্মের মধ্যে বিকশিত করিয়া তুলিবার জন্যই সে সমাজের মধ্যে আপন শিকড় বাধিয়াছিল। যদি সেই লক্ষ্য হইতে ভ্ৰষ্ট হই, জড়ত্ববশত সেই পরিণামকে উপেক্ষ করি, তবে বন্ধন কেবল বন্ধনই থাকিয়া যায়, তবে অতিক্ষুদ্র সন্তোষশাস্তির কোনো অর্থই থাকে না । ভারতবর্ষের লক্ষ্য ক্ষুদ্র নহে, তাহা ভারতবর্ষ স্বীকার করিয়াছে— ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি। ভূমাই মুখ, অল্পে স্থখ নাই। ভারতের ব্ৰহ্মবাদিনী বলিয়াছেন : যেনাহং নামৃত স্তাং কিমহং তেন কুর্ষাম। যাহার দ্বারা অমর না হইব তাহ লইয়া আমি কী করিব ? কেবলমাত্র পারিবারিক শৃঙ্খলা এবং সামাজিক স্বব্যবস্থার দ্বারা অামি অমর হইব না, তাহাতে আমার আত্মার বিকাশ হইবে না। সমাজ যদি আমাকে সম্পূর্ণ সার্থকতা না দেয়, তবে সমাজ আমার কে ? সমাজকে রাখিবার জন্ত যে আমাকে বঞ্চিত হইতে হইবে, এ কথা স্বীকার করা যায় না। যুরোপও বলে, individual’o Go Tottes পঙ্গু ও প্রতিহত করে সে সমাজের বিরুদ্ধে বিশ্লোহ না করিলে হীনতা স্বীকার করা হয়। ভারতবর্ষও অত্যন্ত অসংকোচে নির্তয়ে বলিয়াছে, আত্মার্থে পৃথিবীং ত্যজেং। সমাজকে মুখ্য করিলে উপায়কে উদ্বেগু করা হয়। ভারতবর্ষ তাহা করিতে চাহে নাই, সেইজন্ত তাহার বন্ধন যেমন দৃঢ় তাহার ত্যাগও সেইরূপ সম্পূর্ণ। সাংসারিক পরিপূর্ণতার মধ্যে ভারতবর্ষ আপনাকে বেষ্টিত বদ্ধ কল্পিত