পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Տեր ब्ररौटश-ब्रध्नांबलौ কিন্তু কল জিনিসটাকে একেবারে বরখাস্ত করা যায় না। এক-এক দেবতার এক-এক বাহন আছে– সম্প্রদায়-দেবতার বাহন কল। বহুতর লোককে এক অাদশে গঠিত করিতে গেলে বোধ করি বারো-আনা লোককে অন্ধ অভ্যাসের বশবর্তী করিতে হয়। জগতে যত ধৰ্মসম্প্রদায় আছে তাহদের মধ্যে সজ্ঞান নিষ্ঠাসম্পন্ন লোক বেশি পাওয়া যায় না। খ্ৰীস্টানজাতির মধ্যে আন্তরিক খ্ৰীস্টান কত অল্প তাহা দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা জানিতে পাইয়াছি— এবং হিন্দুদের মধ্যে অন্ধসংস্কারবিমুক্ত যথার্থ জ্ঞানী হিন্দু ষে কত বিরল তাহা আমরা চিরাভ্যাসের জড়তাবশত ভালো করিয়া জানিতেও পাই না । সকল লোকের প্রকৃতি যখন এক হয় নী তখন এক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করিতে গেলে অনেক বাজে মাল-মসলা আসিয়া পড়ে । যে-সকল বাছা-বাছ লোক এই আদর্শের অনুসারী তাহারা সাম্প্রদায়িক কলের ভাবটাকে প্রাণের দ্বারা ঢালিয়া লন। কিন্তু কলটাই যদি বিপুল হইয়া উঠিয়৷ প্রাণকে পিষিয়া ফেলে, প্রাণকে খেলিবার সুবিধা না দেয়, তবেই বিপদ। সকল দেশেই মাঝে মাঝে মহাপুরুষরা উঠিয়া সামাজিক কলের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন করিতে চেষ্টা করেন— সকলকে সতর্ক করিয়া বলেন, কলের অন্ধ গতিকেই সকলে প্রাণের গতি বলিয়া যেন ভ্ৰম না করে । অল্পদিন হইল, ইংরেজ-সমাজে কালাইল এইরূপ চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। অতএব বাহনটিই যখন সমাজদেবতার কাধের উপর চড়িয়া বসিবার চেষ্টা করে, যন্ত্র যখন যন্ত্রীকেই নিজের যন্ত্রস্বরূপ করিবার উপক্রম করে, তখন সমাজে ও সমাজের কলে মাঝে-মাঝে ঝুটাপুটি বাধিয়া যায়। মানুষ যদি সেই যুদ্ধে কলের উপর জয়ী হয় তো ভালে, আর কল যদি মাহুবকে পরাভূত করিয়া চাকার নীচে চাপিয়া রাখে তবেই সর্বনাশ । আমাদের সমাজের প্রাচীন কলটা নিজের সচেতন আদর্শকে অন্তরাল করিয়া ফেলিয়াছে বলিয়া, জড় অনুষ্ঠানে জ্ঞানকে সে আধ-মরা করিয়া পিজরার মধ্যে আবদ্ধ করিয়াছে বলিয়া, আমরা যুরোপীয় আদর্শের সহিত নিজেদের আদর্শের তুলনা করিয়া গৌরব অনুভব করিবার অবকাশ পাই না। আমরা কথায় কথায় লজ্জা পাই। আমাদের সমাজের দুর্ভেন্ত জড়স্তৃপ হিন্দুসভ্যতার কীর্তিস্তম্ভ নহে ; ইহার অনেকটাই ৷ সুদীর্ঘকালের যত্নসঞ্চিত ধুলামাত্র। অনেক সময় যুরোপীয় সত্যতার কাছে ধিক্কার পাইয়া আমরা এই ধূলিস্তৃপকে লইয়াই গায়ের জোরে গর্ব করি, কালের এই সমস্ত অনাহূত আবর্জনারাশিকেই আমরা আপনার বলিয়া অভিমান করি— ইহার অত্যন্তরে যেখানে আমাদের যথার্থ গর্বের ধন হিন্দুসভ্যতার প্রাচীন জাদর্শ আলোক ও বায়ুর অভাবে মূৰ্ছান্বিত হইয়া পড়িয়া জাছে সেখানে দৃষ্টিপাত করিবার পথ পাই না। ।