পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা & eఏ মাঝে মাঝে পোর্ট, মদিরার অতিসেবন ছাড়া আর কিছুতেই তাহার নাড়ী ও র্তাহার মেজাজকে চঞ্চল করিতে পারে নাই। কিন্তু জার-একজন কঠিন বৃদ্ধ তীর্থযাত্রী, যিনি অন্তর এবং বাহিরের দুঃখরাশিসত্ত্বেও যুদ্ধ করিয়া জীবনকে শাস্তির পথে লইয়া গেছেন, যিনি এই সংসারের মায়ার হাটে উপহসিত হইয়া মৃতু্যচ্ছায়ার অন্ধগুহামধ্যে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন এবং যিনি নৈরাশুদৈত্যের বন্ধন হইতে বহু চেষ্টায় বহ কষ্টে উদ্ধার পাইয়াছিলেন, তাহার মৃত্যুশয্যায় আমাদের মনে গভীরতর ভাবাবেগ উচ্ছসিত হইয়া উঠে । যখন দেখিতে পাই এই লোকের অস্তিমকালের হৃদয়বৃত্তি কিরূপ কোমল গম্ভীর এবং সরল, তখন আমরা স্বতই অহুভব করি যে, যে নিরীহ ভদ্রলোকটি পরম শিষ্টাচার রক্ষা করিয়া বাচিয়াছিলেন ও মরিয়াছিলেন তাহার অপেক্ষা উন্নততর সত্তার সন্নিধানে বর্তমান আছি।” * এই বর্ণনা পাঠ করিলে বিদ্যাসাগরের সহিত জনসনের সাদৃশু সহজেই মনে পড়ে। বিদ্যাসাগরও কেবল ক্ষুদ্র সংকীর্ণ অভ্যস্ত ভব্যতার মধ্য দিয়া চলিতে পারেন নাই, তাহারও স্নেহভক্তিদয়, তাহার বিপুলবিস্তীর্ণ হৃদয়, সমস্ত আদব-কায়দাকে বিদীর্ণ করিয়া কেমন অসামান্ত আকারে ব্যক্ত হইত তাহা তাহার জীবনচরিতে নানা ঘটনায় প্রকাশ পাইয়াছে। এইখানে জনসন সম্বন্ধে কালাইল যাহা লিখিয়াছেন তাহার কিয়দংশ অনুবাদ করি।— 事 “তিনি বলিষ্ঠচেতা এবং মহৎ লোক ছিলেন । শেষ পর্যন্তই অনেক জিনিস র্তাহার মধ্যে অপরিণত থাকিয়া গিয়াছিল ; আমুকুল উপকরণের মধ্যে তিনি কী না হইতে পারিতেন— কবি, ঋষি, রাজাধিরাজ । কিন্তু মোটের উপরে, নিজের উপকরণ", নিজের ‘কাল’ এবং ওইগুলা লইয়া নালিশ করিবার প্রয়োজন কোনো লোকেরই নাই ; উহ। একটা নিফল আক্ষেপমাত্র। র্তাহার কালটা খারাপ ছিল, ভালোই ; তিনি সেটাকে আরও ভালো করিবার জন্তই আলিয়াছেন। জনসনের কৈশোরকাল ধনহীন, সঙ্গহীন, আশাহীন এবং দুর্ভাগ্যজালে বিজড়িত ছিল। তা খাৰু, কিন্তু বাহ অবস্থা অন্থকুলতম হইলেও জনসনের জীবন দুঃখের জীবন হওয়া ছাড়া আর-কিছু হওয়া সম্ভবপর হইত না। প্রকৃতি তাহার মহত্বের প্রতিদানস্বরূপ তাহাকে বলিয়াছিল, রোগাতুর দুঃখরাশির মধ্যে বাস করে। না, বোধ করি, দুঃখ এবং মহত্ব ঘনিষ্ঠভাবে, এমন-কি, অচ্ছেদ্যভাবে পরস্পর জড়িত ছিল। ষে কারণেই হউক, অভাগা জনসনকে নিয়তই রোগৰিষ্টতা, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ৰোম, কোমরে বাধিয়া ফিরিতে হইত। তাহাকে একবার কল্পনা করিয়া দেখো— তাহার সেই রুগ্ন শরীর, তাহার