পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ᎼᏬ রবীন্দ্র-রচনাবলী •র্তাহারা নিজের শুভসংকল্প সিদ্ধ করিতে চান বটে, কিন্তু তৎসঙ্গে আপনাকেও প্রচলিত করিতে চান। এ বড়ো বিষম অবস্থা। আপনিই যখন আপনার সংকল্পের প্রতিযোগী হইয় উঠে তখন সংকল্পের অপেক্ষ আপনার প্রতি আদর স্বভাবতই কিঞ্চিৎ অধিক হইয়া পড়ে। তখন সংকল্প অনেক সময়ে হীনবল, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। সে ইতস্তত করিতে থাকে। কথায় কথায় তাহার পরিবর্তন হয়। কিছু কিছু ভালো কাজ সে করিতে পারে, কিন্তু সর্বাঙ্গস্বন্দর কাজটি হইয় উঠে না। ষে আপনার পায়ে আপনি বাধাস্বরূপ বিরাজ করিতে থাকে সংসারের সহস্র বাধা সে অতিক্রম করিবে কী করিয়া ? যে ব্যক্তি আপনাকে ছাড়িয়া সংসারের মধ্যস্থলে নিজের শুভকার্য স্থাপন করে সে স্থায়ী ভিত্তির উপরে নিজের মঙ্গলসংকল্প প্রতিষ্ঠিত করে। আর যে নিজের উপরেই সমস্ত কার্যের প্রতিষ্ঠা করে সে যখন চলিয়া যায় তাহার অসম্পূর্ণ কার্যও তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিয়া যায়, যদি বা বিশৃঙ্খল ভগ্নাবশেষ ধূলির উপরে পড়িয়া থাকে তবে তাহার ভিত্তি কোথাও খুজিয়া পাওয়া যায় না। রামমোহন রায় আপনাকে ভুলিয়া নিজের মহতী ইচ্ছাকে বঙ্গসমাজের মধ্যে রোপণ করিয়াছিলেন, এইজন্য তিনি না থাকিলেও আজ র্তাহার সেই ইচ্ছা জীবন্তভাবে প্রতিদিন বঙ্গসমাজের চারি দিকে অবিশ্রাম কাজ করিতেছে । সমস্ত বঙ্গবাসী তাহার স্বতি হৃদয়পট হইতে মুছিয়া ফেলিতে পারে, কিন্তু তাহার সেই অমর ইচ্ছার বংশ বঙ্গসমাজ হইতে বিলুপ্ত করিতে পারে না। পূর্বেই বলিয়াছি, লঘু-আত্মাই প্রবাহে ভাসিয়া উঠে, ভাসিয়া যায়। যাহার আত্মার গৌরব আছে তিনিই প্রবাহে আত্মসম্বরণ করিতে পারেন। রামমোহন রায়ের এই আত্মধারণাশক্তি কিরূপ অসাধারণ ছিল তাহা কল্পনা করিয়া দেখুন। অতি বাল্যকালে যখন তিনি হৃদয়ের পিপাসায় ভারতবর্ষের চতুর্দিকে আকুল হইয় ভ্রমণ করিতেছিলেন তখন তাহার অন্তরে বাহিরে কী স্থগভীর অন্ধকার বিরাজ করিতেছিল। যখন এই মহানিশীথিনীকে মুহূর্তে দগ্ধ করিয়া ফেলিয়া তাহার হৃদয়ে প্রখর আলোক দীপ্ত হইয়া উঠিল তখন তাহাতে র্তাহাকে বিপর্যন্ত করিতে পারে নাই। সে তেজ, সে আলোক তিনি হৃদয়ে ধারণ করিতে পারিলেন। যুগযুগান্তরের সঞ্চিতঅন্ধকার অঙ্গারের খনিতে যদি বিদ্যুৎশিখা প্রবেশ করে তবে সে কী কণগুই উপস্থিত হয়, ভূগর্ত শতধা বিদীর্ণ হইয়া যায়। তেমনি সহসা জ্ঞানের নূতন উচ্ছ্বাস কয়জন ব্যক্তি সহজে ধারণ করিতে পারে ? কোনো বালক তে পারেই না । কিন্তু রামমোহন রায় অত্যস্ত মহৎ ছিলেন, এইজন্ত এই জ্ঞানের বস্তায় তাহার হৃদয় অটল ছিল ; এই জ্ঞানের বিপ্লবের মধ্যে মাথা তুলিয়া বাহা আমাদের দেশে এৰ মঙ্গলের কারণ হইৰে তাহা