পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা &$‘n সপ্রমাণ করিতে চেষ্টা করিতেছে। ভারতবর্ষ বিশেষ সাধনায় বিশেষভাবে যাহা লাভ করিয়াছে তাহার ভারতবর্ষীয় আকার বিলুপ্ত করিয়া, তাহাকে ভারতবর্ষের ইতিহাস হইতে উৎপাটিত করিয়া, তাহাকে অন্তদেশীয় আকৃতিপ্রকৃতির সহিত মিশ্রিত করিয়া দিবার চেষ্টা করিলে জগতের ঐক্যমূলক বৈচিত্র্যের ধর্মকে লঙ্ঘন করা হয়। প্রত্যেক লোক যখন আপনার প্রকৃতি-অনুসারে পরিপূর্ণ উৎকর্ষ লাভ করে তখনই সে মহন্তৰ লাভ করে ; সাধারণ মহাত্ব ব্যক্তিগত বিশেষত্ত্বের ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত। মচুন্যত্ব হিন্দুর মধ্যে এবং খ্রীস্টানের মধ্যে বস্তুত একই, তথাপি হিন্দু-বিশেষত্ব মনুষ্যত্বের একটি বিশেষ সম্পদ, এবং খ্রীস্টান-বিশেষত্বও মন্থন্তত্বের একটি বিশেষ লাভ ; তাহার কোনোটা সম্পূর্ণ বর্জন করিলে মচুন্যত্ব দৈন্তপ্রাপ্ত হয়। ভারতবর্ষের যাহা শ্ৰেষ্ঠ ধন তাহাও সার্বভৌমিক, যুরোপের বাহা শ্রেষ্ঠ ধন তাহাও সার্বভৌমিক ; তথাপি ভারতবর্ষীয়তা এবং যুরোপীয়তা উভয়ের স্বতন্ত্র সার্থকতা আছে বলিয়া, উভয়কে একাকার করিয়া দেওয়া চলে না। মেঘ আকাশ হইতে জলবর্ষণ করে এবং সরোবর ভূতলে থাকিয়া জল দান করে ; যদিও দানের সামগ্রী একই তথাপি এই পার্থক্যবশতই মেঘ আপন প্রকৃতি-অনুসারে বিশেষভাবে ধন্ত এবং সরোবরও আপন প্রকৃতি-আহসারে বিশেষভাবে কৃতার্থ। ইহারা উভয়ে এক হইয়া গেলে জলের পরিমাণ মোটের উপর কমে না, কিন্তু জগতে ক্ষতির কারণ ঘটে । তরুণ ব্রাহ্মসমাজ যখন পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে এই কথা ভুলিয়াছিল, যখন ধর্মের স্বদেশীয় রূপ রক্ষা করাকে সে সংকীর্ণতা বলিয়া জ্ঞান করিত— যখন সে মনে করিয়াছিল, বিদেশীয় ইতিহাসের ফল ভারতবর্ষীয় শাখায় ফলাইয়া তোলা সম্ভবপর এবং সেই চেষ্টাতেই যথার্থভাবে ঔদার্ধ রক্ষা হয়, তখন পিতৃদেব সার্বভৌমিক ধর্মের স্বদেশীয় প্রকৃতিকে একটা বিমিশ্রিত একাকীরত্বের মধ্যে বিসর্জন দিতে অস্বীকার করিলেন। ইহাতে র্তাহার অনুবর্তী অসামান্তপ্রতিভাশালী ধর্মোৎসাহী অনেক তেজস্বী যুবকের সহিত র্তাহার বিচ্ছেদ ঘটিল। এই বিচ্ছেদ স্বীকার করিতে যে দৃঢ়তা, যে সাহস, যে বলের প্রয়োজন হয়, সমস্ত মতামতের কথা বিশ্বত হইয়া আজ তাহাই যেন আমরা স্মরণ করি। আধুনিক হিন্দুসমাজের প্রচলিত লোকাচারের প্রবল প্রতিকূলতার মুখে আপন অনুবর্তী সমাজের ক্ষমতাশালী সহায়গণকে পরিত্যাগ করিয়া নিজেকে সকল দিক হইতেই রিক্ত করিতে কে পারে, যাহার অন্তঃকরণ জগতের অশিক্তির অক্ষয় নিৰ্ব্বধারায় অহরহ পূর্ণ হইয়া না উঠিতেছে। একবার বর্তমান সমাজের প্রতিকূলে, আর-একবার হিন্দুসমাজের অমুকুলে তাহাকে