পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

£6 e রবীন্দ্র-রচনাবলী ধ্যানেই আছে, কোনোখানেই তা বিষয়ীকৃত হয় নি, এ কথা মানতে তার ভালো লাগে না। তাই তার পুরাণে স্বৰ্গলোকের অবতারণা। যা আমাদের ভাবে রয়েছে অ্যাবস্ট্যাক্ট স্বর্গে তাই পেয়েছে রূপ। যেমন, ষে কল্যাণের পূর্ণ আদর্শ সংসারে প্রত্যহ দেখতে পাই নে, অথচ যা আছে আমাদের ভাবে, সত্যযুগে মাহুষের মধ্যে তাই ছিল বাস্তবরূপে এই কথা মনে করে তৃপ্তি পাই। তেমনি এই কথা মনে করে আমাদের তৃপ্তি যে, নারীরূপের ষে অনিন্দনীয় পূর্ণতা আমাদের মন খোজে তা অবাস্তব নয়, স্বর্গে তার প্রকাশ উর্বশী-মেনকা-তিলোত্তমায়। সেই বিগ্রহিণী নারীমূর্তির বিস্ময় ও আনন্দ উর্বশী কবিতায় বলা হয়েছে। অন্তত পৌরাণিক কল্পনায় এই উর্বশী একদিন সত্য ছিল, যেমন সত্য তুমি আমি। তখন মর্তলোকেও তার আনাগোনা ঘটত, মামুষের সঙ্গেও তার সম্বন্ধ ছিল ; সে সম্বন্ধ অ্যাবসট্র্যাক্ট নয়, বাস্তব। যথা পুরুরবার সঙ্গে তার সম্বন্ধ। কিন্তু কোথায় গেল সেদিনকার সেই উর্বশী । আজ তার ভাঙাচোরা পরিচয় ছড়িয়ে অাছে অনেক মোহিনীর মধ্যে, কিন্তু সেই পূর্ণতার প্রতিমা কোথায় গেল ! ফিরিবে না, ফিরিবে না, অস্ত গেছে সে গৌরবশশী । একটা কথা মনে রেখো। উর্বশীকে মনে করে যে সৌন্দর্ষের কল্পনা কাব্যে প্রকাশ পেয়েছে, লক্ষ্মীকে অবলম্বন করলে সে অাদর্শ অন্তরকম হত ; হয়তো তাতে শ্রেয়স্তত্ত্বের উচুস্বর লাগত। কিন্তু রসিক লোকে কাব্যের বিচার এমন করে করে না। উর্বশী উর্বশীই, তাকে যদি নীতি-উপদেশের খাতিরে লক্ষ্মী করে গড়তুম তা হলে ধিক্কারের যোগ্য হতুম। [ ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ ] ங் —রবিরক্ষি ‘সিন্ধুপারে কবিতা সম্বন্ধে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত একখানি পত্রে কবি বলিয়াছেন— যে প্রাণলক্ষ্মীর সঙ্গে ইহজীবনে আমাদের বিচিত্র মুখদু:খের সম্বন্ধ, মৃত্যুর রাত্রে আশঙ্কা হয়, সেই সম্বন্ধবন্ধন ছিন্ন করে বুঝি আর-কেউ নিয়ে গেল। যে নিয়ে যায় মৃত্যুর ছদ্মবেশে সেও সেই প্রাণলক্ষ্মী। পরজীবনে সে যখন কালে ঘোমটা খুলবে তখন দেখতে পাব চিরপরিচিত মুখশ্ৰী। কোনো পৌরাণিক পরলোকের কথা বলছি নে সে কথা বলা বাহুল্য, এবং কাব্যরসিকদের কাছে এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে বিবাহের অহুষ্ঠানটা রূপক। পরলোকে আমাদের প্রাণসঙ্গিনীর সঙ্গে ঠিক এইরকম মন্ত্র পড়ে মিলন ঘটবে সে আশা নেই। আসল কথা, পুরাতনের সঙ্গে মিলন হবে নূতন আনন্দে। -ब्लदिब्रह्नि