পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক ७8१ নূতন অবতার নন্দকৃষ্ণ মুখােপাধ্যায়। ་་ (স্বগত) তুমি রুদন্দুর বকশি ব্রাহ্মণের ব্রহ্মোত্তর পুষ্করিণীটি কেড়ে নিয়ে খিড়কির পুকুর করেছ। আচ্ছা, দেখা যাবে তুমি ভােগ কর কেমন করে। ঐ পুকুরে দু বেলা ছত্ৰিশ জাতকে স্নান করবে। তবে আমি ব্ৰাহ্মণের ছেলে । (সমাগত প্ৰতিবেশীবর্গের প্রতি) তা, তোমরা তো সব শুনেছ দেখছি। সে স্বপ্নের কথা মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে । ভাই, উপরি-উপরি তিন রাত্তির স্বপ্ন দেখলুম- মা গঙ্গা মকরের উপর চড়ে আমার শিয়রের কাছে এসে বললেন, ‘ওরে বেটা নন্দ, তোর কুবুদ্ধি ধরেছিল, তাই তুই রুদন্দুর বকশির সঙ্গে পুষ্করিণী নিয়ে মামলা করতে গিয়েছিল। রুদন্দুর বকশি কে তা জানিস ? সত্যযুগে যে ছিল ভগীরথ সে-ই আজ বকশির ঘরে আবির্ভাব করেছে। হুগলি পুলের উপর দিয়ে যেদিন থেকে গাড়ি চলেছে সেই দিন থেকে আমিও তোদের ঐ পুষ্করিণীতে এসে অধিষ্ঠান করেছি।” তখন আমার মনে হল, ওরে বাপ রে! কী কাণ্ডই করেছি! যিনি স্বয়ং কলিযুগের ভগীরথ । র্তারই সঙ্গে কিনা গঙ্গার দখল নিয়ে আদালতে মকদ্দমা ! এমন পাপও করে ! এখন বুঝতে পারছি মকদ্দমায় কেন হার হল এবং তোমরা পাড়ার সকলেই বা আদালতে হলফ নিয়ে কেন পরিষ্কার মিথ্যে সাক্ষি দিয়ে এলে। এ-সমস্তই দেবতার কাণ্ড । তোমাদের মুখ দিয়ে অনর্গল মিথ্যে কথা একেবারে যেন গোমুখী থেকে গঙ্গাম্রোতের মতো বেরোতে লাগল ; আমি নিতান্ত মূঢ়মতি পাপিষ্ঠ বলে প্রকৃত তত্ত্ব তখনো বুঝতে পারলুম না- মায়াতে অন্ধ হয়ে রইলুম এবং টাকাগুলো কেবল উকিলে লুটে খেলে ! অশ্রুবিসর্জন । এবং ভক্তিবিহবল নরনারীগণের হরিধ্বনিসহকারে কলিযুগের ভগীরথী-দর্শনে গমন দ্বিতীয় অঙ্ক রুদ্রনারায়ণ বকশি (স্বগত) তাই বটে !— ছেলেবেলা থেকে বরাবর অকারণে কেমন আমার একটা ধারণা ছিল যে, আমি বড়ো কম লোক নই। এত দিনে তার কারণটা বোঝা যাচ্ছে। আর এও দেখেছি, ব্ৰাহ্মণের ঐ পুষ্করিণীটির প্রতি আমার অনেক দিন থেকে লোভ পড়েছিল ; থেকে থেকে আমার কেবলই মনে হত, ও পুকুরটা কোনােমতে ঘিরে না নিতে পারলে মেয়েছেলেদের ভারি অসুবিধে হচ্ছে। একেবারে সাফ মনেই ছিল না যে, আমি ভগীরথী, আর মা গঙ্গা এখনো আমাকে ভুলতে পারেন নি। উঃ, সে জন্মে যে তপিস্যেটা করেছিলুম এ জন্মেকার মিথ্যে মকদ্দমাগুলো তার কাছে লাগে কোথায় ! (ভক্তমণ্ডলীর প্রতি ঈষৎ সহাস্যে) তা কি আর আমি জানতেম না ! কিন্তু তোমাদের কাছে কিছু ফাস করি নি, কী জানি পাছে বিশ্বাস না কর । কলিকালে দেবতা-ব্ৰাহ্মণের প্রতি তো কারও ভক্তি । নেই। তা ভয় নেই, আমি তোমাদের সব অপরাধ মাপ করলুম - কে গো তুমি ? পায়ের ধুলো ? তা, এই নাও (পদপ্রসারণ)। তুমি কী চাও গা ? পাদােদক ? এসো, এসো। নিয়ে এসে তােমার বাটি- এই নাও— খেয়ে ফেলো। ভোরবেলা থেকে পাদোদক দিতে দিতে আমার সর্দি হয়ে মাথা ভার হয়ে এল।— বাছা, তোমরা সব এসো, কিছু ভয় নেই। এতদিন আমাকে চিনতে পারনি সে তো আর তোমাদের দোষ নয়। আমি মনে করেছিলুম কথাটা তোমাদের কাছে প্রকাশ করব না, যেমন চলছে এমনিই চলবে- তোমরা আমাকে তোমাদের মাধব বকশির ছেলে রুদন্দুর বকশি বলেই জানবে। (ঈষৎ হাস্য) কিন্তু মা গঙ্গা যখন স্বয়ং ফাস করে দিলেন তখন আর নুকোতে পারলুম না। . /