পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক । ○8述 এখানে মৃত্যু নেই। অশ্বিনীকুমার-নামক দুই বৈদ্য যে পদটি পেয়েছেন ওঁদের যদি বাধা খোরাক বরাদ্দ না থাকত তা হলে সমস্ত স্বৰ্গ বেঁটিয়ে এক পয়সা ভিজিট জুটত না । তবে কী করতে যে ওঁরা এখানে । আছেন তা আমাদের মানুষের বুদ্ধিতে বুঝতে পারি নে। কাউকে তো খরচের হিসাব দিতে হয় না, যার যা খুশি তাই হচ্ছে। থাকত একটা মনিসিপ্যালিটি, এবং নিয়মমত কাজ হত, তা হলে আমি তো সর্বাগ্রে ঐ দুটি হেলথ-অফিসারের পদ উঠিয়ে দেবার জন্যে লড়তুম। এই-যে রোজ সভার মধ্যে - অমৃত ছড়াছড়ি যাচ্ছে, তার একটা হিসেব কোথাও আছে ? সেদিন তো শচীঠাকরুনকে স্পষ্টই মুখের উপর জিজ্ঞাসা করলুম, স্বর্গের সমস্ত ভাড়ার তো আপনার জিন্মায় আছে ; পাকা খাতায় হােক, খসড়ায় হােক, তার কোনো-একটা হিসেব রাখেন কি- হাতচিঠিা কি রসিদ, কি কোনো রকমের একটা নিদর্শন রাখা হয় ? শচীঠাকরুন বোধ করি মনে মনে রাগ করলেন ; স্বৰ্গ সৃষ্টি হয়ে অবধি এরকম প্রশ্ন তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে নি। যা পাব্লিকের জিনিস তার একটা রীতিমত জবাবদিহি থাকা চাই, সে । বোধটা এদের কারও দেখতে পাই নে । অজস্র আছে বলেই কি অজস্র খরচ করতে হবে ! যদি আমাকে বেশিদিন এখানে থাকতেই হয় তা হলে স্বর্গের সমস্ত বন্দােবস্ত আগাগোড়া রিফর্ম না করে আমি নড়ছি নে । আমি দেখছি, গোড়ায় দরকার অ্যাজিটেশন— ঐ জিনিসটা স্বর্গে একেবারেই নেই ; সব দেবতাই বেশ সস্তুষ্ট হয়ে বসে আছেন । এদের এই তেত্ৰিশ কোটিকে একবার রীতিমত বিচলিত করে তুলতে পারলে কিছু কাজ হয় । এখানকার লোকসংখ্যা দেখেই আমার মনে হয়েছিল এখানে একটি বড়ো রকমের দৈনিক কিংবা সাপ্তাহিক খবরের কাগজ বেশ চালানাে যেতে পারে। আমি যদি সম্পাদক হই, তা হলে আর দুটি উপযুক্ত সাব-এডিটর পেলেই কাজ আরম্ভ করে দিতে পারি। প্রথমত নারদকে দিয়ে খুব এক চােট বিজ্ঞাপন বিলি করতে হয়। তার পরে বিষ্ণুলোেক ব্ৰহ্মলোক চন্দ্ৰলোক সূর্যলোকে গুটিকতক নিয়মিত সংবাদদাতা নিযুক্ত করতে হয়। আহা, এই কাজটি যদি আমি করে যেতে পারি তা হলে স্বর্গের এ চেহারা আর থাকে না। যারা-সব দেবতাদের ঘুষ দিয়ে দিয়ে স্বৰ্গে আসেন, প্রতি সংখ্যায় তাদের যদি একটি করে সংক্ষেপ-মর্তজীবনী বের করতে পারি তা হলে আমাদের স্বগীয় মহাত্মাদের মধ্যে একটা সেনসেশন পড়ে যায়। একবার ইন্দ্রের কাছে আমার প্ৰস্তাবগুলো পেড়ে দেখতে হবে । ( ইন্দ্রের নিকট গিয়া) দেখুন মহেন্দ্র, আপনার সঙ্গে আমার গোপনে কিছু (অন্সরগণকে দেখিয়া) ও ! আমি জানতুম না ঐরা সব এখানে আছেন— মাপ করবেন— আমি যাচ্ছি। এ কী, শচীঠাকরুনও যে বসে আছেন । আর, ঐ বুড়ো বুড়ে রাজর্ষি-দেবর্ষিগুলোই বা এখানে বসে কী দেখছে! দেখুন মহেন্দ্ৰ, স্বৰ্গে স্বায়ত্তশাসন-প্রথা প্রচলিত করেন নি বলে এখানকার কাজকর্ম তেমন ভালো রকম করে চলছে না। আপনি যদি কিছুকাল এই-সমস্ত নাচ-বাজনা বন্ধ করে দিয়ে আমার সঙ্গে আসেন তা হলে আমি আপনাকে হাতে হাতে দেখিয়ে দিতে পারি এখানকার কোনাে কাজেরই বিলিব্যবস্থা নেই। কার ইচ্ছায় কী করে যে কী হচ্ছে কিছুই দন্তস্ফুট করবার জো নেই। কাজ এমনতরো পরিষ্কার ভাবে হওয়া উচিত যে, যন্ত্রের মতো চলবে এবং চােখ বুলিয়ে দেখবামােত্রই বোঝা যাবে। আমি সমস্ত নিয়ম নম্বরওয়ারি করে লিখে নিয়ে এসেছি ; আপনার সহস্ৰ চক্ষুর মধ্যে একজোড়া চােখও যদি এ দিকে ফেরান তা হলে— আচ্ছ, তবে এখন থাক, আপনাদের গান-বাজনাগুলো নাহয় হয়ে যাক, তার পরে (२ों याद । (ভরত ঋষির প্রতি) আচ্ছা, অধিকারীমশায়, শুনেছি গান-বাজনায় আপনি ওস্তাদ, একটি প্রশ্ন আপনার কাছে আছে। গানের সম্বন্ধে যে ক'টি প্রধান অঙ্গ আছে, অর্থাৎ সপ্ত সুর, তিন গ্রাম, একুশ মূৰ্ছনা— কী বললেন ? আপনারা এ-সমস্ত মানেন না ? আপনারা কেবল আনন্দন্টুকু জানেন ! তাই তো দেখছি- এবং যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। (কিয়ৎক্ষণ শুনিয়া) ভারতীঠাকুর, ঐ-যে ভদ্রমহিলাটি- কী ওঁর নাম- রম্ভ ? উপাধি কী বলুন। উপাধি বুঝছেন না ? এই যেমন রম্ভ চাটুজে কি রম্ভ ভট্টাচাৰ্য, কিংবা ক্ষত্ৰিয় যদি হন তো রম্ভ সিংহ- এখানে আপনাদের ও-সব কিছু নেই বুঝি ? আচ্ছা, বেশ কথা, তা, শ্ৰীমতী রম্ভ যে গানটি গাইলেন। আপনারা তো তার যথেষ্ট প্রশংসা