পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা। নৌকা ভেসে চলে যায় পূৰ্ণবায়ুভরে তুর্ণস্রোতোবেগে । মধ্যগগনের পরে উদিল প্ৰচণ্ড সূর্য । গ্রামবধূগণ গৃহে ফিরে গেছে করি স্নান সমাপন সিক্তবস্ত্ৰে, কাংস্যঘটে লয়ে গঙ্গাজল । ভেঙে গেছে প্ৰভাতের হাট ; কোলাহল থেমে গেছে দুই তীরে ; জনপদ বাট পাস্থহীন । বটতলে পাষাণের ঘাট, সেথায় বাধিল নৌকা স্নানাহার—তরে কর্ণধার । তন্দ্রাঘন বটশাখা-’পরে ছায়ামগ্ন পক্ষিনীড় গীতশব্দইনি । অলস পতঙ্গ শুধু গুঞ্জে দীর্ঘ দিন । পাৱক শস্যগন্ধহারা মধ্যাহ্নের বায়ে শ্যামার ঘোমটা যবে ফেলিল খসায়ে অকস্মাৎ, পরিপূর্ণ প্ৰণয়পীড়ায় ব্যথিত ব্যাকুল বক্ষ, কণ্ঠ রুদ্ধপ্ৰায়, বজাসেন কানে কানে কহিল শ্যামারে, ‘ক্ষণিকশঙ্খলমুক্ত করিয়া আমারে বাধিয়াছ অনন্ত শৃঙ্খলে । কী করিয়া সাধিলে দুঃসাধ্য ব্ৰত কহাে বিবরিয়া । মোর লাগি কী করেছ জানি যদি প্ৰিয়ে, পরিশোধ দিব তাহা এ জীবন দিয়ে এই মোর পণ । বস্ত্ৰ টানি মুখ-’পরি * সে কথা এখনো নহে কহিল সুন্দরী । গুটািয়ে সোনার পাল সুদূরে নীরবে দিনের আলোকতরী চলি গেল। যাবে তাস্ত- আচলের ঘাটে, তীর-উপবনে লাগিল শ্যামার নৌকা সন্ধ্যার পবনে । শুক্ল চতুর্থীর চন্দ্ৰ অস্তগত প্ৰায়, নিস্তরঙ্গ শাস্ত জলে সুদীর্ঘ রেখায় বিকিমিকি করে ক্ষীণ আলো ; বিল্লিস্বনে তরুমাল-অন্ধকার কঁাপিছে সঘনে বীণার তন্ত্রীর মতো । ‘প্ৰদীপ নিবায়ে তরীবাতায়নতিলে দক্ষিণের বায়ে ঘননিশ্বসিত মুখে যুবকের কাধে হেলিয়া বসেছে শ্যামা | পড়েছে অবাধে উন্মুক্ত সুগন্ধ কেশরাশি সুকোমল বিদেশীর, সুনিবিড় তন্দ্ৰাজালসম । কহিল আস্ফুটিকণ্ঠে শ্যামা, ‘প্ৰিয়তম, ) C