পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য \86ł থাকেন তখন বঙ্গ সাহিতে্যুর ক্ষীণ আশর আলোকটুকু একান্ত কম্পিত ও নির্বাপিতপ্রায় হইয়া আসে। কিন্তু তথাপি বলা যাইতে পারে, ফুৎকার যতই প্রবল হউক শীর্ণ দীপশিখা তাহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । বর্তমান বাংলালেখকেরা বঙ্গসাহিত্যের প্রথম ভিত্তি-নির্মাণে প্রবৃত্ত আছেন। সুতরাং যাহারা ইংরাজি গ্ৰন্থত্বপশিখরের উপর চড়িয়া নিম্নে দৃষ্টিপাত করেন তাহারা ইহাদিগকে ছােটাে বলিয়া মনে করিতে পারেন। ইহারা মাটির উপরে দাঁড়াইয়া খাটিয়া মরিতেছেন, তাহারা উচ্চচূড়ায় বসিয়া কেবল হাওয়া খাইতেছেন ; এরূপ স্থলে উভয়ের মধ্যে সমকক্ষতার ভাব রক্ষা করা দুরূহ হইয়া পড়ে। এই দুই দলের মধ্যে যদি প্রকৃত উচ্চনীচতা থাকে তবে আর কোনাে কথাই নাই। কিন্তু তাহার কোনো প্ৰমাণ পাওয়া যায় না । যাহারা শুদ্ধমাত্র পরের চিন্তালব্ধ ধন সঞ্চয় করিয়া জীবনযাপন করেন র্তাহারা জানেন না নিজে কোনাে বিষয় আনুপূর্বক চিন্তা করা এবং সেই চিন্তা ভাষায় ব্যক্ত করা কী কঠিন। অনেক বড়ো বড়ো কথা পরের মুখ হইতে পরিপক্ক ফলের মতো অতি সহজে পাড়িয়া লওয়া যায়, কিন্তু অতি ছোটাে কথাটিও নিজে ভাবিয়া গড়িয়া তোলা বিষম ব্যাপার। যে ব্যক্তি কেবলমাত্র পাঠ করিয়া শিখিয়াছে, সঞ্চয় করা ছাড়া বিদ্যাকে আর কোনোপ্রকার ব্যবহারে লাগায় নাই, সে নিজে ঠিক জানে না সে কতটা জানে এবং কতটা জানে না। যে শ্রেণীর সমালোচকের কথা বলিতেছি তাহারা যখন বাংলা পড়েন তখন মনে মনে বাংলাকে ইংরাজিতে অনুবাদ করিয়া লন, সুতরাং সমালোচ্য গ্রন্থের প্রতি তাহদের শ্রদ্ধা থাকিতে পারে না। বাংলাভাষার প্রাণের মধ্যে র্তাহারা প্রবেশ করেন নাই, প্রবেশ করিবার অবসর পান নাই। মাতৃভূমি হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইলে সকল সাহিত্যই স্নান নিজীব ভােব ধারণ করে, তখন তাহার প্রতি সমালোচনশর প্রয়োগ করা কেবল “মড়ার উপর খাড়ার ঘা দেওয়া মাত্র । যাহারা বাংলা লেখেন তাহারাই বাংলা ভাষার বাস্তবিক চর্চা করেন ; অগত্যই তাহাদিগকে বাংলাচর্চা করিতে হয়। বাংলা ভাষার প্রতি তঁহাদের অনুরাগ শ্রদ্ধা অবশ্যই আছে। বঙ্গভাষা রাজভাষা নহে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা নহে, সম্মানলাভের ভাষা নহে, অর্থে পার্জনের ভাষা নহে, কেবলমাত্র মাতৃভাষা। যাহাদের হৃদয়ে ইহার প্রতি একান্ত অনুরাগ ও অটল ভরসা আছে তঁহাদেরই ভাষা। যাহারা উপেক্ষাভরে দূরে থাকেন তাহারা বাংলা ভাষার প্রকৃত পরিচয় লাভ করিতে কোনাে সুযোগই পান নাই। তাহারা তর্জমা করিয়া বাংলার বিচার করেন। অতএব সভয়ে নিবেদন করিতেছি এরপন্থলে তঁহাদের মতের অধিক মূল্য নাই। : বৈশাখ ১২৯৯ श्रद्धळ्नां? লোকেন্দ্রনাথ পালিতকে লিখিত S - লেখা সম্বন্ধে তুমি যে প্রস্তাব করেছ সে অতি উত্তম। মাসিক-পত্রে লেখা অপেক্ষা বন্ধুকে পত্ৰ লেখা অনেক সহজ। কারণ, আমাদের অধিকাংশ ভােবই বুনো হরিণের মতো, অপরিচিত লোক দেখলেই দৌড় দেয়। আবার পোষা ভােব এবং পোষা হরিণের মধ্যে স্বাভাবিক বন্যশ্ৰী পাওয়া যায় না। কাজটা দু রকমে নিম্পন্ন হতে পারে। এক, কোনাে একটা বিশেষ বিষয় স্থির করে দু জনে বাদপ্রতিবাদ করা— কিন্তু তার একটা আশঙ্কা আছে, মীমাংসা হুবার পূর্বেই বিষয়টা ক্রমে একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে। আর-এক, কেবল চিঠি লেখা- অর্থাৎ কোনো উদ্দেশ্য না রেখে লেখা, কেবল লেখার জন্যেই লেখা। অর্থাৎ ছুটির দিনে দুই বন্ধুতে মিলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া ; তার পরে যেখানে গিয়ে পড়ি তাতে কিছু আসে যায় না, এবং পথ হারালেও কোনাে মানবের কাছে কৈফিয়ত দেবার নেই। r