পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী যত তার বাহু ধরি টানাটানি করে রহিল সে তরণী আঁকড়ি । অবশেষে ব্ৰাহ্মণ করুণ স্নেহে কহিলেন হোসে, “থাক থাক সঙ্গে যাক ৷” মা রাগিয়া বলে, “চল তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে |’ যেমনি সে কথা গেল। আপনার কানে আমনি মায়ের বক্ষ অনুতাপবাণে বিধিয়া কঁাদিয়া উঠে । মুদিয়া নয়ন “নারায়ণ নারায়ণ’ করিল স্মরণ । পুত্রে নিল কোলে তুলি, তার সর্বদেহে করুণ কল্যাণহস্ত বুলাইল স্নেহে । মৈত্র তারে ডাকি ধীরে চুপিচুপি কয়, “ছি ছিা ছি, এমন কথা বলিবার নয় ।” রাখাল যাইবে সাথে স্থির হল কথা— অন্নদা লোকের মুখে শুনি সে বারতা ছুটে আসি বলে, “বাছা, কোথা যাবি ওরে !” রাখাল কহিল হাসি, ‘চলিনু সাগরে, আবার ফিরিব মাসি !’ পাগলের প্রায় বড়ো যে দুরন্ত ছেলে রাখাল আমার, মাসি ছেড়ে বেশিক্ষণ থাকে নি কোথাও— কোথা এরে নিয়ে যাবে, ফিরে দিয়ে যাও ।” রাখাল কহিল, “মাসি, যাইব সাগরে, আবার ফিরিব আমি |* বিপ্ৰ স্নেহভরে কহিলেন, “যতক্ষণ আমি আছি ভাই, তোমার রাখাল লাগি কোনো ভয় নাই । এখন শীতের দিন শান্ত নদীনদ, অনেক যাত্রীর মেলা, পথের বিপদ । তোমারে ফিরায়ে দিব তোমার রাখাল ।” শুভক্ষণে দুৰ্গা স্মরি নৌকা দিল ছাড়ি, দাড়ায়ে রহিল ঘাটে যত কুলনারী অশ্রঞ্চ চোখে । হেমন্তের প্রভাতশিশিরে ছলছল করে গ্রাম চুণানদীতীরে } যাত্রীদল ফিরে আসে ; সাঙ্গ হল মেলা । তরণী তীরেতে বাধা অপরাহুবেলা জোয়ারের আশে । কৌতুহল অবসান, কঁদিতেছে রাখালের গৃহাগত প্ৰাণ