পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S心 রবীন্দ্র-রচনাবলী + জন্তে চারিদিকে হাত বাড়াচ্ছে তখনও সে সেই এককেই খুজে বেড়াচ্ছে। আমরাও শিশুরই মতো নানা জিনিসকে ছুচ্ছি শুকছি মুখে দিচ্ছি, তাকে আঘাত করছি তার থেকে আঘাত পাচ্ছি, তাকে জমাচ্ছি এবং তাকে আবর্জনার মতে ফেলে দিচ্ছি। এই সমস্ত পরীক্ষা এই সমস্ত চেষ্টার ভিতর দিয়ে সমস্ত দুঃখে সমস্ত লাভে আমরা সেই এককেই চাচ্ছি। আমাদের জ্ঞান একে পৌছোতে চায়, আমাদের প্রেম একে মিলতে চায়। এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো কথা নেই। আনন্দান্ধ্যেৰ খৰিমানি ভূতানি জায়ন্তে । আনন্দ আপনাকে নানারূপে নানাকালে প্রকাশ করছেন, আমরা সেই নানারূপকেই কেবল দেখছি, কিন্তু আমাদের আত্মা দেখতে চায় নানার ভিতর দিয়ে সেই মূল এক আনন্দকে। যতক্ষণ সেই মূল আনন্দের কোনো আভাস না দেখি ততক্ষণ কেবলই বস্তুর পর বস্তু, ঘটনার পর ঘটনা আমাদের ক্লান্ত করে ক্লিষ্ট করে আমাদের অন্তহীন পথে ঘুরিয়ে মারে। আমাদের বিজ্ঞান সমস্ত বস্তুর মধ্যে এক সত্যকে খুজছে, আমাদের ইতিহাস সমস্ত ঘটনার মধ্যে এক অভিপ্রায়কে খুজছে, আমাদের প্রেম সমস্ত সত্তার মধ্যে এক আনন্দকে খুজছে। নইলে সে কোনোখানেই বলতে পারছে না—ওঁ । বলতে পারছে না—ই, পাওয়া গেল । আমরা যখন একটা অন্ধকার ঘরে আমাদের প্রার্থনীয় বস্তুকে খুজে বেড়াই তখন চারিদিকে মাথা ঠকতে থাকি উচট খেতে থাকি, তখন কত ছোটো জিনিসকে বড়ো মনে করি, কত তুচ্ছ জিনিসকে বহুমূল্য বলে মনে করি, কত জিনিসকে অঁাকড়ে ধরে বলি এই তো পেয়েছি। তার পরে দেখি মুঠোর মধ্যেই সেটা গুড়িয়ে ধুলো হয়ে যায়। আসল কথা এই অন্ধকারে আমি জানিই নে আমি কাকে চাচ্ছি। কিন্তু যেমনি একটি আলো জালা হয় আমনি এক মুহুর্তেই সমস্ত সহজ হয়ে যায়—আমনি এতদিনের এত খোজা এত মাথা ঠোকার পরে এক পলকেই জানতে পারি যে, য+সমস্ত আমার হাতে ঠেকছিল তাই আমার প্রার্থনীয় জিনিস নয়। যে মা এই সমস্ত ঘরটি সাজিয়ে চুপ করে বসে ছিলেন তিনিই আমার যথার্থ কামনার ধন। যেমনি আলোটি জলল অমনি সব জিনিস ছেড়ে দু-হাত বাড়িয়ে ছুটে তার কাছে গেলুম। অথচ মাকে পাবামাত্রই অমনি তার সঙ্গে সব জিনিসকেই একত্রে পাওয়া গেল, কোনো জিনিস স্বতন্ত্র হয়ে আমার পথের বাধারূপে আমাকে আটক করলে না। মাকে জানবামাত্র মায়ের এই সাজানো ঘরটি আমারই হয়ে গেল। তখন ঘরের সমস্ত আসবাবপত্রের মধ্যে আমার সঞ্চরণ অবাধ হয়ে উঠল, তখন ষে-জিনিসের ঠিক যে-ব্যবহার তা আমার আয়ত্ত হয়ে গেল, তখন জিনিসগুলো আমাকে অধিকার করল না, আমিই তাদের অধিকার করলুম।