পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন 蟲 83ፋ কিন্তু এই নতির মধ্যে অপমান নেই। কেননা তিনি কেবলমাত্র আমার বড়ে নন তিনি আমার আপন, আমার পিতা। তিনি আমারই বড়ো, আমি তারই ছোটো। তাকে প্রণাম করে আমি আমার বড়ো আমাকেই প্রণাম করি। এর মধ্যে বাইরের কোনো তাড়না নেই—জবরদস্তি নেই। ষে বড়োর মধ্যে আমি আছি, ৰে বড়োর মধ্যেই পরিপূর্ণ সার্থকতা তাকে প্রণাম করাই একমাত্র স্বাভাবিক প্রণাম। কিছু পাৰ বলে প্ৰণাম নয়, কিছু দেব বলে প্ৰণাম নয়, ভয়ে প্রণাম নয়, জোরে প্রণাম নয়। আমারই অনন্ত গৌরবের উপলদ্ধির কাছে প্রণাম । এই প্রণামটির মহত্ত্ব অনুভব করেই প্রার্থনা করা হয়েছে, নমস্তেহস্ত, তোমাতে আমার নমস্কার সত্য হয়ে উঠুক। তাকে পিতা নোহলি বলে স্বীকার করলে তার সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধের একটি পরিমাণ রক্ষা হয়। তাকে নিয়ে কেবল ভাবরসে প্রমত্ত হবার যে একটি উচ্ছ স্থল আত্মবিস্মৃতি আছে সেটি আমাদের আক্রমণ করতে পারে না। সন্ত্রমের দ্বারা আমাদের আনন্দ গাম্ভীর্ষ লাভ করে, আচঞ্চল গৌরব প্রাপ্ত হয় । প্রাচীন বেদ সমস্ত মানব-সম্বন্ধের মধ্যে কেবল এই পিতার সম্বন্ধটিকেই ঈশ্বরের মধ্যে বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করেছেন। মাতার সম্বন্ধকেও সেখানে তারা স্থান দেন নি । কারণ, মাতার সম্বন্ধেও একদিকে যেন ওজন কম আছে, একদিকে সম্পূর্ণতার অভাব আছে । মাতা সস্তানের স্থখ দেখেন, আরাম দেখেন ; তার ক্ষুধাতৃপ্তি করেন, তার শোকে সাত্বনা দেন, তার রোগে শুশ্ৰুষা করেন। এ সমস্তই সন্তানের উপস্থিত অভাবনিবৃত্তির প্রতিই লক্ষ্য করে । 畔 পিতার দৃষ্টি সন্তানের সমস্ত জীবনের বৃহংক্ষেত্রে। তার সমস্ত জীবন সমগ্রভাবে সার্থক হবে এই তিনি কামনা করেন । এইজন্যই সস্তানের আরাম ও স্থখই তার কাছে একান্ত নয়। এইজন্ত তিনি সস্তানকে দুঃখণ্ড দেন। তাকে শাসন করেন, তাকে বঞ্চিত করেন, যাতে নিয়ম লঙ্ঘন করে ভ্ৰষ্টত প্রাপ্ত না হয় সেদিকে তিনি সর্বদ সতর্ক থাকেন । O o - অর্থাং পিতার মধ্যে মাতার স্নেহ আছে কিন্তু লে-স্নেহ সংকীর্ণ সীমায় বন্ধ নয় বলেই তাকে অতি প্রকট করে দেখা যায় না এবং তাকে নিয়ে যেমন ইচ্ছা খেলা চলে না। সেইজন্তে পিতাকে নমস্কার করবার সময় বলা হয়েছে, নমঃ সম্ভবায় চ ময়োভবায় চ; যিনি দুখকর উাকে নমস্কার যিনি কল্যাণকর উাকে নমস্কার। # পিতা কেবল আমাদের জুখের আয়োজন করেন না, তিনি মঙ্গলের বিধান করেন।