পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* * * ब्रयौटण-ब्रक्रमांबलौ এ যদি না হয়, আমরা যদি মনে করি সকলের সঙ্গে যে-যোগে জামাদের মঙ্গল, আমাদের স্থিতি, আমাদের সামঞ্চস্ত, ষে-যোগ আমাদের অস্তিত্বের মূলে তাকে ছাড়িয়ে নিজে অত্যন্ত উন্নত হয়ে ওঠবার আয়োজন করব, নিজের স্বাতন্ত্র্যকেই একেবারে নিত্য এবং উংকট করে তোলবার চেষ্টা করব, তবে তা কোনোমতেই সফল এবং স্থায়ী হতে পারবেই না। একটা মস্ত ভাঙাচোরার মধ্যে তার অবসান হতেই হবে। জগতে যত কিছু বিপ্লব, সে এমনি করেই হয়েছে। যখনই প্রতাপ এক জায়গায় পূজিত হয়েছে, যখনই বর্ণের, কুলের, ধনের, ক্ষমতার ভাগ-বিভাগ ভেদ-বিভেদ পরস্পরের মধ্যে ব্যবধানকে একেবারে দুলৰ্ভঘ করে তুলেছে তখনই সমাজে ঝড় উঠেছে। যিনি অদ্বৈতম, যিনি নিখিল জগতের সমস্ত বৈচিত্র্যকে একের সীমা লঙ্ঘন করতে দেন না তাকে একাকী ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে জয়ী হতে পারবে এত বড়ো শক্তি কোন রাজার বা রাজ্যের আছে। কেননা সেই অদ্বৈতের সঙ্গে যোগেই শক্তি, সেই যোগের উপলব্ধিকে শীর্ণ করলেই দুর্বলতা । এইজন্তেই অহংকারকে বলে বিনাশের মূল, এই জন্তেই ঐক্যহীনতাকেই বলে শক্তিহীনতার কারণ। অদ্বৈতই যদি জগতের অন্তরতররূপে বিরাজ করেন এবং সকলের সঙ্গে যোগসাধনই যদি জগতের মূলতত্ত্ব হয় তবে স্বাতন্ত্র্য জিনিসটা আসে কোথা থেকে, এই প্রশ্ন মনে আসতে পারে। স্বাতন্ত্র্যও সেই অদ্বৈত থেকেই আসে, স্বাতন্ত্র্যও সেই অদ্বৈতেরই প্রকাশ । জগতে এই সব স্বাতন্ত্র্যগুলি কেমন ? না, গানের যেমন তান । তান যতদূর পর্যন্ত যাক না, গানটিকে অস্বীকার করতে পারে না, সেই গানের সঙ্গে তার মূলে যোগ থাকে । সেই যোগটিকে সে ফিরে ফিরে দেখিয়ে দেয়। গান থেকে তানটি যখন হঠাৎ ছুটে বেরিয়ে চলে তখন মনে হয় সে বুঝি বিক্ষিপ্ত হয়ে উধাও হয়ে চলে গেল বা, কিন্তু তার সেই ছুটে যাওয়া কেবল মূল গানটিতে আবার ফিরে আসবার জন্তেই, এবং সেই ফিরে আসার রসটিকেই নিবিড় করার জন্তে। বাপ যখন লীলাচ্ছলে দুই হাতে করে শিশুকে আকাশের দিকে তোলেন, তখন মনে হয় যেন তিনি তাকে দূরেই নিক্ষেপ করতে যাচ্ছেন,—শিশুর মনের ভিতরে ভিতরে তখন একটু ভয় ভয় করতে থাকে, কিন্তু একবার তাকে উংক্ষিপ্ত করেই আবার পরমুহূর্তেই তাকে বুকের কাছে টেনে ধরেন। বাপের এই লীলার মধ্যে সত্য জিনিস কোনটা ? বুকের কাছে টেমে ধরাটাই, তার কাছ থেকে ছুড়ে ফেলাটাই নয়। বিচ্ছেদের ভাবটি এবং ভয়টুকুকে সৃষ্টি করা এই জন্তে যে সত্যকার বিচ্ছেদ লেই সেই আনন্দকেই বারংবার পরিস্ফুট করে তুলতে হবে বলে। n . . . . . . .