পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外雷ö觅 ፩ፄ যাবান্নবিন্দতে জায়াং তাবাদর্ধোভবেৎ পুমান। যন্ন বালৈঃ পরিবৃতঃ শ্মশানমিব তদগুহম। কিন্তু তোমাতে তদবৈপরীত্যই লক্ষিত হচ্ছে। কারণ কিনা, যখন তোমার ব্ৰাহ্মণী বিদ্যমান ছিলেন তখন তুমি ভয়ে আশঙ্কায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিলে, স্ত্রীবিয়োগের পর আবার দেখতে দেখতে শরীর দ্বিগুণ হয়ে উঠল। অপরন্তু শাস্ত্ৰে যে লিখছে বালকের দ্বারা পরিবৃত না হইলে গৃহ শ্মশানসমান হয়, কিন্তু বালক-কর্তৃক পরিবৃত হওয়া প্ৰযুক্তই তোমার গৃহ শ্মশানসমান হয়েছে।” এই বলিয়া সমীপস্থ সকলকে চোখ টিপিতেন ও সকলে উচ্চৈঃস্বরে হাসিলে পর তিনি সন্তোষের সহিত মুহুরমুহু নস্য লইতেন । ওপারের একটি মেয়ের সঙ্গে সার্বভৌম মহাশয়ের সম্বন্ধ হইয়াছে। এ কয়দিন পণ্ডিতমহাশয় বড়ো মনের স্মৃর্তিতে আছেন। পাঠশালার ছুটি হইয়াছে। আজ পত্র দেখিতে আসিবে, পাড়ার কোনো দুষ্ট লোকের পরামর্শ শুনিয়া পণ্ডিতমহাশয় নরেন্দ্রের নিকট হইতে এক জোড়া ফুল মােজা, জরির পােশাক ও পাগড়ি চাহিয়া আনিলেন। পাড়ার দুষ্ট লোকেরা এই সকল বেশ পরাইয়া তাহাকে সঙ সাজাইয়া দিল। ক্ষুদ্রপরিসর পাগড়িটি পণ্ডিতমহাশয়ের বিশাল মস্তকের টিকির অংশটুকু অধিকার করিয়া রহিল মাত্র, চার পাঁচটা বোতাম ছিড়িয়া কষ্টে-সৃষ্ট পণ্ডিতমহাশয়ের উদরের বেড়ে চাপকন কুলাইল । অনেকক্ষণের পর বেশভূষা সমাপ্ত হইলে পর সার্বভৌম মহাশয় দর্পণে একবার মুখ দেখিলেন। জরির পোশাকের চাকচিক্য দেখিয়া তাহার মন বড়ো তৃপ্ত হইল। কিন্তু সেই ঢলঢলে জুতা পরিয়া, আঁট সাট চাপকন গায়ে দিয়া চলিতেও পারেন না, নড়িতেও পারেন না, জড়ভরতের মতো এক স্থানে বসিয়াই রহিলেন। মাথা একটু নিচু করিলেই মনে হইতেছে পাগড়ি বুঝি খসিয়া পড়িবে। ঘাড়-বেদনা হইয়া উঠিল, তথাপি যথাসাধ্য মাথা উচু করিয়া রাখিলেন । ঘণ্টাখানেক এইরূপ বেশে থাকিয় তাহার মাথা ধরিয়া উঠিল, মুখ শুকাইয়া গেল, অনর্গল ঘর্ম প্রবাহিত হইতে লাগিল, প্ৰাণ কণ্ঠাগত হইল। পল্লীর ভদ্রলোকেরা আসিয়া অনেক বুঝাইয়া-সুঝাইয়া তাহার বেশ পরিবর্তন করাইল । ভট্টাচাৰ্যমহাশয় তাহার অব্যবস্থিত গৃহ পরিষ্কৃত ও সজ্জিত করিবার নিমিত্ত নানা খোেশামোদ করিয়া নিধিরাম ভট্টকে আহবান করিয়াছেন । এই নিধিরামের উপর পণ্ডিতমহাশয়ের অতিরিক্ত ভক্তি ছিল । তিনি বলিতেন, গাৰ্হস্থ ব্যাপার সুচারুরূপে সম্পন্ন করিতে নিধি র্তাহার পুরাতন গৃহিণীর সমান, মকদ্দমার নানাবিধ জটিল তর্কে সে স্বয়ং মেজেস্টোর সায়েবকেও ঘোল পান করাইতে পারে এবং সকল বিষয়ের সংবাদ রাখিতে ও চতুরতাপূর্বক সকল কাজ সম্পন্ন করিতে সে কলেজের ছেলেদের সমােনই হউক বা কিছু কমই হউক । চতুরতাভিমানী লোকেরা আপনার অভাব লইয়া গর্ব করিয়া থাকে। যে ব্যক্তি গাৰ্হস্থ্য ব্যবস্থার চতুরতা জানাইতে চায় সে আপনার দারিদ্র্য লইয়া গর্ব করে, অর্থাৎ ‘অর্থের অভাব সত্ত্বেও কেমন সুচারুরূপে সংসারের শৃঙ্খলা সম্পাদন করিতেছি । নিধি র্তাহার মূর্থিতা লইয়া গর্ব করিতেন। গল্পবাগীশ লোক মাত্রেই পণ্ডিতমহাশয়ের প্রতি বড়ো অনুকূল। কারণ, নীরবে সকল প্রকারের গল্প শুনিয়া যাইতে ও বিশ্বাস করিতে পল্লীতে পণ্ডিতমহাশয়ের মতো আর কেহই ছিল না । এই গুণে বশীভূত হইয়া নিধি মাসের মধ্যে প্রায় দুই শত বার করিয়া তাহার এক বিবাহের গল্প শুনাইতেন। গল্পের ডালপালা ছাটিয়া-ছুটিয়া দিলে সারমর্ম এইরূপ দাঁড়ায়- নিধিরাম ভট্ট বর্ণপরিচয় পর্যন্ত শিখিয়াই লেখাপড়ায় দাঁড়ি দিয়াছিলেন, কিন্তু চালাকির জোরে বিদ্যার অভাব পূরণ করিতেন। নিধির বিবাহ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে, কিন্তু এমন শ্বশুর পৃথিবীতে নাই যে নিধির মতো গােমুখকে জানিয়া শুনিয়া কন্যা সম্প্রদান করে। অনেক কৌশলে ও পরিশ্রমে পাত্রী স্থির হইল। আজ জামাতাকে পরীক্ষা করিতে আসিয়াছে। অদ্বিতীয় চতুর নিধি দাদার সহিত পরামর্শ করিয়া একটি পালকি আনাইল এবং চাপকন ও শামলা পরিয়া গুটিকতক কাগজের তাড়া হাতে করিয়া কন্যা-কর্তাদিগের সম্মুখেই পালকিতে চড়িলেন। দাদা কহিলেন, 'ও নিধি, আজ যে তোমাকে দেখতে এয়েচোন।’ নিধি কহিলেন, 'না দাদা, আজ সাহেব সকাল সকাল আসবে, ঢের কাজ ঢের লেখাপড়া আছে, আজ আর হচ্ছে না।”