পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Ο Νι রবীন্দ্র রচনাবলী নরেন্দ্র । কেন, কী হইয়াছে। নিধি। না, কিছুই হয় নাই, তবে কিনা— সে কথা থাক— বাবুটির বাড়ি কোথায় । নরেন্দ্র | কলিকাতা । নিধি । আমিও তাহাঁই ঠাওরাইয়াছিলাম, নহিলে এমন স্বভাব হইবে কেন । নরেন্দ্র । কেন, কী হইয়াছে, বলোই-না ! i নিধি । আমি সে কথা বলিতে চাহি না । কিন্তু উহাকে বাড়ি হইতে বাহির করিয়া দেও । নরেন্দ্ৰ অধীর হইয়া উঠিয়া কহিল, “কী কথা বলিতেই হইবে।” নিধি কহিল, “যাহা হইয়া গিয়াছে তাহার আর চারা নাই, কিন্তু সাবধান থাকিয়ো, ও লোকটি আর যেন বাড়ির ভিতরের দিকে না যায়।” নরেন্দ্র । সেকি কথা, স্বরূপ তো বাড়ির ভিতরে যায় নাই । নিধি । সে কি তোমাকে বলিয়া গিয়াছে । নরেন্দ্র অবাক হইয়া নিধির মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। নিধি কহিল, “আমি তো ভাই, আমার কাজ করিলাম, এখন তোমার যাহা কর্তব্য হয় করো ।” নরেন্দ্ৰ ভাবিল, এ-সকল তো বড়ো ভালো লক্ষণ নয় । স্বরূপ কয়দিন ধরিয়া ভাবিয়াছে যে, করুণা তাহার জন্য একেবারে পাগল এ কথা নিধি সহসা তাহাকে কেন কহিল ; বুঝিল, নিশ্চয় করুণা তাহাকে দিয়া বলিয়া পঠাইয়াছে। স্বরূপ ভাবিল, “তবে আমিও তাহার প্রেমে পাগল এ কথাও তো তাহাকে জানানো উচিত।” স্থির করিলা সুবিধা পাইলে । নিজে গিয়া জানাইবে । 悼 জ্যোৎস্না রাত্রি । ছেলেবেলা করুণা যেখানে দিন-রাত্রি খেলা করিয়া বেড়াইত সেই বাগানের ঘাটের উপর সে শুইয়া আছে, অতি ধীরে ধীরে বাতাসটি গায়ে লাগিতেছে। সেই জ্যোৎস্নারাত্রির সঙ্গে, সেই মৃদু বাতাসটির সঙ্গে, সেই নারিকেলবনটির সঙ্গে তাহার ছেলেবেলাকার কথা এমন জড়িত ছিল, যেন তাহারা তার ছেলেবেলাকারই একটি অংশ। সেই দিনকার কথাগুলি, শ্মশানে বায়ু উচ্ছাসের ন্যায় করুণার প্রাণের ভিতর গিয়া হু হু করিতে লাগিল। যন্ত্রণায় করুণার বুক ফাটিয়া, বুকের বঁাধন যেন ছিড়িয়া অশ্রুর স্রোত উচ্ছসিত হইয়া উঠিল । । বাগানে আর দুইজন লোক লুকাইয়া আছে, নরেন্দ্র ও স্বরূপ। নরেন্দ্র চুপিচুপি স্বরূপের পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিয়াছে, দেখিবে স্বরূপ কী করে । করুণা সহসা দেখিল একজন লোক আসিতেছে। চমকিয়া উঠিল, জিজ্ঞাসা করিল, “কেও।” স্বরূপ কহিল, “আমি স্বরূপচন্দ্র । নিধিকে দিয়া যে কথা বলিয়া পাঠানো হইয়াছিল তাহা কি স্মরণ নাই ।” করুণা তাড়াতাড়ি ঘোমটা টানিয়া চলিয়া যাইতেছে, এমন সময়ে নরেন্দ্র আর না থাকিতে পারিয়া ‘বাহির হইয়া পড়িল । করুণা তাড়াতাড়ি অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল। নরেন্দ্ৰ ভাবিল তাহাকে দেখিতে পাইয়াই করুণা ভয়ে পলাইয়া গেল বুঝি । ষোড়শ পরিচ্ছেদ নরেন্দ্ৰ কহিল, “হতভাগিনী, বাহির হইয়া যা !” করুণা কিছুই কহিল না। “এখনই দূর হইয়া যা ।” করুণা নরেন্দ্রের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। নরেন্দ্ৰ মহা রুষ্ট হইল, অগ্রসর হইয়াকঠোর ভাবে করুণার হস্ত ধরিল । করুণা কহিল, “কোথায় যাইব ।”