পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 by রবীন্দ্র-রচনাবলী সংসারে বঞ্চিত করি তব পূজা নহে। কবি আপনার গানে যত কথা কহে নানা জনে লাহে তার নানা অর্থটানি, তোমাপানে ধায় তার শেষ অর্থখানি ! আমার কাব্য ও জীবন সম্বন্ধে মূলকথাটা কতক কবিতা উদধূত করিয়া, কতক ব্যাখ্যা দ্বারা বোঝাইবার চেষ্টা করা গেল। বােঝাইতে পারিলাম কি নাজানি না— কারণ, বোঝানো-কাজটা সম্পূর্ণ আমার নিজের হাতে নাই- যিনি বুঝিবেন তাহার উপরেও অনেকটা নির্ভর করবে। আশঙ্কা আছে, অনেক পাঠক বলিবেন, কাব্যও হেঁয়ালি রহিয়া গেল, জীবনটাও তথৈবচ। বিশ্বশক্তি যদি আমার কল্পনায় আমার জীবনে এমন বাণীরূপে উচ্চারিত হইয়া থাকেন। যাহা অন্যের পক্ষে দুর্বোিধ। তবে আমার কাব্য আমার জীবন পৃথিবীর কাহারও কোনো কাজে লাগিবে না— সে আমারই ক্ষতি, আমারই ব্যর্থতা । সেজন্য আমাকে গালি দিয়া কোনো লাভ নাই, আমার পক্ষে তাহার সংশোধন অসম্ভবउाभाद्ध जाना (कानों ठि छिल ना । বিশ্বজগৎ যখন মানবের হৃদয়ের মধ্য দিয়া, জীবনের মধ্য দিয়া মানবভাষায় ব্যক্ত হইয়া উঠে তখন তাহা কেবলমাত্র প্রতিধ্বনি-প্রতিচ্ছায়ার মতো দেখা দিলে বিশেষ কিছু লাভ নাই। কেবলমাত্র ইন্দ্ৰিয়দ্বারা আমরা জগতের যে পরিচয় পাইতেছি তাহা জগৎপরিচয়ের কেবল সামান্য একাংশমাত্রসেই পরিচয়কে আমরা ভাবুকদিগের, কবিদিগের, মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদিগের চিত্তের ভিতর দিয়া কালে কালে নবতররূপে গভীরতররূপে সম্পূর্ণ করিয়া লইতেছি। কোন গীতিকাব্যরচয়িতার কোন কবিতা ভালো, কোনটা মাঝারি, তাহাই খণ্ড খণ্ড করিয়া দেখানাে সমালোচকের কাজ নহে। তাহার সমস্ত কাব্যের ভিতর দিয়া বিশ্ব কোন বাণীরূপে আপনাকে প্রকাশ করিতেছে তাহই বুঝিবার যোগ্য। কবিকে । উপলক্ষ করিয়া বীণাপাণি বাণী, বিশ্বজগতের প্রকাশশক্তি, আপনাকে কোন আকারে ব্যক্তি করিয়াছেন তাহাঁই দেখিবার বিষয় । F জগতের মধ্যে যাহা অনির্বচনীয় তাহা কবির হৃদয়দ্বারে প্রত্যহ বারংবার আঘাত করিয়াছে, সেই অনির্বচনীয় যদি কবির কাব্যে বচন লাভ করিয়া থাকে- জগতের মধ্যে যাহা অপরূপ তাহা কবির মুখেব দিকে প্রত্যহ আসিয়া তাকাইয়াছে, সেই অপরূপ যদি কবির কাব্যে রূপলাভ করিয়া থাকেযাহা চােখের সম্মুখে মূর্তিরূপে প্রকাশ পাইতেছে তাহা যদি কবির কাব্যে ভােবরূপে আপনাকে ব্যাপ্ত করিয়া থাকে— যাহা অশরীরভােবরূপে নিরাশ্রয় হইয়া ফিরে তাহাই যদি কবির কাব্যে মূর্তি পরিগ্রহ করিয়া সম্পূর্ণতালাভ করিয়া থাকে- তবেই কাব্য সফল হইয়াছে এবং সেই সফল কাব্যই কবির প্রকৃত জীবনী । সেই জীবনীর বিষয়ীভূত ব্যক্তিটিকে কাব্যরচয়িতার জীবনের সাধারণ ঘটনাবলীর মধ্যে ধরিবার চেষ্টা করা বিড়ম্বনা । বাহির হইতে দেখো না এমন করে, আমায় দেখো না বাহিরে । আমায় পাবে না। আমার দুখে ও সুখে, আমার বেদন খুঁজে না আমার বুকে, আমায় দেখিতে পাবে না। আমার মুখে, কবিরে খুজিছ যেথায় সেথা সে নাহি রে - যে আমি স্বপনমুরতি গোপনচারি, যে আমি আমারে বুঝিতে বোঝাতে নারি, আপন গানের কাছোতে আপনি হারি, সেই আমি কবি, এসেছি কাহারে ধরিতে ?