পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মপরিচয় »(ሰã এ আহবান এ. তো শক্তিকেই আহবান ? কৰ্মক্ষেত্রেই এর ডাক ; রস-সম্ভোগের কুঞ্জকাননে নয়— সেইজন্যেই এর শেষ উত্তর এই-- হবে, হবে হবে জয় হে দেবী, করি নে ভয়, হব আমি জয়ী । তোমার আহবানবাণী সফল করিব রানী, হে মহিমাময়ী । কঁাপিবে না। ক্লান্তকর, ভাঙিবে না। কণ্ঠস্বর, টুটিবে না বীণা নবীন প্ৰভাত লাগি দীর্ঘরাত্রি রব জাগি দীপ নিবিবে না। কর্মভার নবপ্রাতে নবসেবকের হাতে করি যাব দান, মোর শেষ কণ্ঠস্বরে যাইব ঘোষণা করে তোমার আহবান । আমার ধর্ম আমার উপচেতন-লোকের অন্ধকারের ভিতর থেকে ক্ৰমে ক্রমে চেতন-লোকের আলোতে যে উঠে আসছে এই লেখাগুলি তারই স্পষ্ট ও অস্পষ্ট পায়ের চিহ্ন । সে চিহ্ন দেখলে বোঝা যায় যে, পথ সে চেনে না এবং সে জানে না ঠিক কোন দিকে সে যাচ্ছে। পথটা সংসারের কি অতিসংসারের তাও সে বোঝে নি। যাকে দেখতে পাচ্ছে তাকে নাম দিতে পারছে না, তাকে নানা নামে ডাকছে। যে লক্ষ্য মনে রেখে সে পা ফেলছিল বার বার, হঠাৎ আশ্চর্য হয়ে দেখছে, আর-একটা দিকে কে তাকে নিয়ে চলছে । পদে পদে তুমি ভুলাইলে দিক, কোথা যাব আজি নাহি পাই ঠিক, ক্লান্তহৃদয় ভ্ৰান্ত পথিক এসেছি নূতন দেশে। কখনো উদার গিরির শিখরে কভু বেদনার তমোগহবরে চিনি না যে পথ সে পথের ‘পরে চলেছি পাগল বেশে । এই আবছায়া রাস্তায় চলতে চলতে যে একটি বোধ কবির সামনে ক্ষণে ক্ষণে চমক দিচ্ছিল তার কথা তখনকার একটা চিঠিতে আছে, সেই চিঠির দুই-এক অংশ তুলে দিই— কে আমাকে গভীর গভীর ভাবে সমস্ত জিনিস দেখতে বলছে, কে আমাকে অভিনিবিষ্ট স্থির কর্ণে সমস্ত বিশ্বাতীত সংগীত শুনতে প্ৰবৃত্ত করছে, বাইরের সঙ্গে আমার সূক্ষ্ম ও প্রবলতম যোগসূত্রগুলিকে প্রতিদিন সজাগ সচেতন করে তুলছে ? আমরা বাইরের শাস্ত্র থেকে যে ধর্ম পাই সে কখনোই আমার ধর্ম হয়ে ওঠে না । তার সঙ্গে কেবলমাত্র একটা অভ্যাসের যোগ জন্মে। ধর্মকে নিজের মধ্যে উদভূত করে তােলাই মানুষের চিরজীবনের সাধনা। চরম বেদনায় তাকে জন্মদান করতে হয়, নাড়ির শোণিত দিয়ে তাকে প্রাণদান করতে চাই, তার পরে জীবনে সুখ পাই আর না-পাই আনন্দে চরিতার্থ হয়ে মরতে পারি।