পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমবায়নীতি OSNO আবির্ভাব হচ্ছে। একদা দুর্বল জীব প্রবল জীবের রাজ্যে জয়ী হয়েছে, আজও দুর্বল হবে জয়ীপ্রবলকে মেরে নয়, নিজের শক্তিকে ঐক্যদ্বারা প্রবলরাপে সত্য করে। সেই জয়ধ্বজা দূর হতে আমি দেখতে পাচ্ছি। সমবায়ের শক্তি দিয়ে আমাদের দেশের সেই জয়ের আগমনী সূচিত হচ্ছে। আমার পূর্ববর্তী বক্তা ডেনমার্কের উল্লেখ করেছেন । কিন্তু একটি কথা তিনি ভুলেছেন, ভারতবর্ষের অবস্থা ও ডেনমার্কের অবস্থা ঠিক সমান নয়। ডেনমার্ক আজ dairy farm-এ যে উন্নতি করেছে তার মুলে শুধু সমবায় নয় ; সেখানকার গবর্মেন্টের ইচ্ছায় ও চেষ্টায় dairy farm-এর উন্নতির জন্য প্ৰজাসাধারণের শিক্ষার ব্যাপক ব্যবস্থা হয়েছে। ডেনমার্কের মতো স্বাধীন দেশেই সরকারের তরফ থেকে সাধারণকে এমন সাহায্য করা সম্ভব । ডেনমার্কের একটি মন্ত সুবিধা এই যে, সে দেশ রণসজ্জার বিপুল ভারে পীড়িত নয়। তার সমস্ত অর্থই প্ৰজার বিচিত্র কল্যাণের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে নিযুক্ত হতে পারে। প্রজার শিক্ষা স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সম্পদের জন্যও আমাদের রাজস্বের ভারমোচন আমাদের ইচ্ছাধীন নয়। প্রজাহিতের জন্য রাজস্বের যে উদবুত্ত থাকে তা শিক্ষাবিধান প্রভৃতি কাজের জন্য যৎসামান্য । এখানেও আমাদের সমস্যা হচ্ছে রাজশক্তির সঙ্গে প্রজাশক্তির নিরতিশয় অসাম্য। প্রজার শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রভৃতি কল্যাণের থেকে জয়ী হতে হবে। এই কথাটি আমি বহুকাল থেকে বার বার বলেছি, আজও বার বার বলতে হবে । আমাদের দেশে একদিন ছিল ধনীর ধানের উপর সমাজের দাবি । ধনী তার ধানের দায়িত্ব লোকমতের প্রভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হত । তাতে তখনকার দিনে কাজ চলেছে, সমাজ বেঁচেছে । কিন্তু সেই দানদাক্ষিণ্যের প্রথা থাকাতে সাধারণ লোকে আত্মবেশ হতে শিখতে পারেনি। তারা অনুভব করে নি যে, গ্রামের অন্ন ও জল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ধর্ম ও আনন্দ তাদের প্রত্যেকের শুভ-ইচ্ছার সমবায়ের উপরেই নির্ভর করে । সেই কারণেই আজ যখন আমাদের সমাজনীতির পরিবর্তন হয়েছে, ধনের ভোগ যখন একান্ত ব্যক্তিগত হল, ধনের দায়িত্ব যখন লোকহিতে সহজ ভারে নিযুক্ত নয়, তখন লোক আপনি হিতসাধন করতে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়েছে। আজ ধনীরা শহরে এসে ধনভোগ করছে বলেই গ্রামের সাধারণ লোকেরা আপন ভাগ্যের কার্পণ্য নিয়ে হাহাকার করছে। তাদের বাঁচবার উপায় যে তাদেরই নিজের হতে এ কথা বিশ্বাস করবার শক্তি তাদের নেই। গোড়ায় অন্নের ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস যদি জাগিয়ে তুলতে পারা যায়,এই বিশ্বাসকে সাৰ্থক ভাবে প্রমাণ করা যায়, তা হলেই দেশ ক্রমে সকল দিকেই বাঁচবে। অতএব সমবায়রীতির দ্বারা এই সত্যকে সাধারণের মধ্যে প্রচার করা আমাদের আজকের দিনের কর্তব্য । লঙ্কার বহুখাদ্যখাদক দশমুণ্ডধারী বহু-অৰ্থ-গৃধু দশ-হাতওয়ালা রাবণকে মেরেছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বানরের সংঘবদ্ধ শক্তি। একটি প্রেমের আকর্ষণে সেই সংঘটি বেঁধেছিল। আমরা যাকে রামচন্দ্ৰ বলি তিনিই প্রেমের দ্বারা দুর্বলকে এক করে তাদের ভিতর প্রচণ্ড শক্তিবিকাশ করেছিলেন । আজ আমাদের উদ্ধারের জন্যে সেই প্রেমকে চাই, সেই মিলনকে চাই । & Vishny R YOO8 সমবায়নীতি সভ্যতার বিশেষ অবস্থায় নগর আপনিই গ্রামের চেয়ে প্রাধান্য লাভ করে। দেশের প্রাণ যে নগরে বেশি বিকাশ পায় তা নয় ; দেশের শক্তি নগরে বেশি সংহত হয়ে ওঠে এই তার গীেয়াব। সামাজিকতা হল লোকালয়ের প্রাণ। এই সামাজিকতা কখনোই নগরে জমাট বাঁধতে পারে না। তার একটা কারণ এই যে, নগর আয়তনে বড়ো হওয়াতে মানুষের সামাজিক সম্বন্ধ সেখানে স্বভাবতই