পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লীপ্রকৃতি \O\ტრh নিয়ে তঁরা স্বৰ্গকেই রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। দানবের ব্যবহার স্বর্গের ব্যবহার না হতে পারে, কিন্তু যে বিদ্যা দানবকে শক্তি দিয়েছে সেই বিদ্যাই দেবতাকেও শক্তি দেয়-বিদ্যার মধ্যে জাতিভেদ নেই। আজকের দিনে আমাদের দেশে সর্বদাই শুনতে পাই, য়ুরোপের বিদ্যা আমরা চাই নে এ বিদ্যায় শয়তানি আছে। এমন কথা আমরা বলব না । বলব না, শক্তি আমাদের মারছে, অতএব অশক্তিই আমাদের শ্ৰেয় । শক্তির মার নিবারণ করতে গেলে শক্তিকে গ্রহণ করতে হয়, তাকে ত্যাগ করলে মার বড়ে বৈ কমে না। সত্যকে অস্বীকার করলেই সত্য আমাদেরকে বিনাশ করে, তখন তার প্রতি অভিমান করে বলা মূঢ়তা যে "সত্যকে চাই নে । উপনিষদ বলেন, যিনি এক তিনি ‘বর্ণাননেকান নিহিতার্থে দধতি- নানা জাতির লোককে তাদের নিহিতার্থ দান করেন । নিহিতার্থ, অর্থাৎ প্রজারা যা চায় প্রজাপতি সেটা তাদের অন্তরেই প্রচ্ছন্ন করে রেখেছেন । মানুষকে সেটা আবিষ্কার করে নিতে হয়, তা হলেই দানের জিনিস তার নিজের হয়ে ওঠে। যুগে যুগে এই নিহিতার্থ প্রকাশ পেয়েছে। এই-যে নিহিতার্থ তিনি দিয়েছেন, এ বহুধা শক্তিযোগাৎ— বহুধা শক্তির যোগে। নিহিতার্থের সঙ্গে সেই বহুদিকগামী শক্তিকে পাই। আজকের যুগের যুরোপীয় সাধকেরা মানুষের সেই নিহিতার্থের একটা বিশেষ সন্ধান পেয়েছেন- তারই যোগে বিশেষ শক্তিকে পেয়েছেন। সেই শক্তি আজ বহুধা হয়ে বিশ্বকে নূতন করে জয় করতে বেরিয়েছে। কিন্তু এই শক্তি, এই অর্থ র্যার, তিনি সকল বর্ণের লোকের পক্ষেই এক- একোহবৰ্ণঃ । সেই শক্তির অর্থ যে-কোনো বিশেষ কালে বিশেষ জাতির কাছে ব্যক্ত হােক-না কেন, তা সকল কালের সকল জাতির পক্ষেই এক । বিজ্ঞানের সত্য যে পণ্ডিত যখনই আবিষ্কার করুন, জাতিনির্বিশেষে তা এক । অতএব এই শক্তি-আবিষ্কার আমাদের সকলকে এক করবার সহায়তা করে যেন । বিজ্ঞান যেখানে সত্য সেখানে বস্তুতই সে সকল জাতির মানুষকে ঐক্য দান করছে। কিন্তু তার শক্তির ভাগাভাগি নিয়ে মানুষ হানাহানি করে থাকে ; সেই বিরোধ সত্যের বা শক্তির মধ্যে নয়, আমাদের চরিত্রে যে অসত্য, যে অশক্তি, তারই মধ্যে। সেইজন্যে এই শ্লোকেরই শেষে আছে- সনোবুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনতু। তিনি আমাদের সকলকে, সকলের শক্তিকে, শুভবুদ্ধি-দ্বারা যোগযুক্ত করুন। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮ შ&mitā ა\ტტ6. দেশের কাজ শ্ৰীনিকেতন বাৎসরিক উৎসবে কথিত আমাদের শাস্ত্রে বলে ছটি রিপুর কথা- কাম, ক্ৰোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। তাকেই রিপু, বলে, যাতে আত্মবিস্মৃতি আনে। এমনি করে নিজেকে হারানােই মানুষের সর্বনাশ করে, এই রিপুই জাতির পতন ঘটায়। এই ছটি রিপুর মধ্যে চতুর্থটির নাম মোেহ। সে অন্ধতা আনে দেশের চিত্তে, অসাড়তা আনে তার প্রাণে, নিরুদ্যম করে দেয় তাঁর আত্মকর্তৃত্বকে । মানবস্বভাবের মূলে যে সহজাত শক্তি আছে তার প্রতি বিশ্বাস সে ভুলিয়ে দেয়। এই বিহ্বলতার নামই মোহ। আর এই মোহেরই উলটাে হচ্ছে মদ— অহংকারের মত্ততা। মােহ আমাদের আত্মশক্তিতে বিস্মৃতি আনে, আমরা যা তার চেয়ে নিজেকে হীন করে দেখি ; আল গর্ব, সে আপনাকে অসত্যভাবে বড়ো করে তোলে। এ জগতে অনেক অভু্যুদয়শালী মহাজাতির পতন হয়েছে অহংকারে অন্ধ হয়ে । স্পর্ধার বেগে তারা সত্যের সীমা লঙ্ঘন করেছে। আমাদের মরণ কিন্তু উলটাে পথে- আমাদের আচ্ছন্ন করেছে অবসাদের কুয়াশায় ।