পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१ीथकृठि Vobry হলকর্ষণ শ্ৰীনিকেতন হলকর্ষণ -উৎসবে কথিত পৃথিবী একদিন যখন সমুদ্রমানের পর জীবধাস্ত্রীরূপ ধারণ করলেন তখন তার প্রথম যে প্রাণের আতিথ্যক্ষেত্র সে ছিল অরণ্যে । তাই মানুষের আদিম জীবনযাত্রা ছিল অরণ্যচররাপে । পুরানে আমরা দেখতে পাই, এখন যে-সকল দেশ মরুভূমির মতো, প্রখর গ্ৰীষ্মের তাপে উত্তপ্ত, সেখানে এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত দণ্ডক নৈমিষ খাণ্ডব ইত্যাদি বড়ো বড়ো সুনিবিড় অরণ্য ছায়া বিস্তার করেছিল । আর্য ঔপনিবেশিকরা প্ৰথম আশ্রয় পেয়েছিলেন এই সব অরণ্যে, জীবিকা পেয়েছিলেন একই ফলে মূলে, আর আত্মজ্ঞানের সূচনা পেয়েছিলেন। এরই জনবিরল শান্তির গভীরতায় । জীবনযাত্রার প্রথম অবস্থায় মানুষ জীবিকানির্বাহের জন্য পশুহত্যায় প্রবৃত্ত হয়েছিল। তখন সে জীবজননী ধরিত্রীর বিদ্রোহাচরণ করেছে। এই বর্বরতার যুগে মানুষের মনে মৈত্রীর স্থান ছিল না । হিংস্রতা অনিবাৰ্য হয়ে উঠেছিল । তখন অরণ্য মানুষের পথ রোধ করে নিবিড় হয়ে থাকত। সে ছিল এক দিকে আশ্রয়, অন্য দিবে। বাধা । যারা এই দুৰ্গমতার মধ্যে একত্র হবার চেষ্টা করেছে তারা অগত্যা ছোটাে সীমানায় ছোটো ছোটো দল বেঁধে বাস করেছে । এক দল অন্য দলের প্রতি সংশয় ও বিদ্বেষের উদ্দীপনাকে নিরন্তর জুলিয়ে রেখেছে। এইরকম মনোবৃত্তি নিয়ে তাদের ধর্মানুষ্ঠান হয়েছে নরঘাতক । মানুষ মানুষের সবচেয়ে নিদারুণ শক্র হয়ে উঠেছে, সেই শক্রতার আজও অবসান হয় নি। এই-সব দূস্প্ৰবেশ্য বাসস্থান ও পশুচারণভূমির অধিকার হতে পরম্পরকে বঞ্চিত করবার জন্য তারা ক্রমাগত নিরস্তর লড়াই করে এসেছে । পৃথিবীতে যে-সব জন্তু টিকে আছে তারা স্বজাতিহত্যার দ্বারা এরকম পরস্পর ধ্বংসসাধনের চর্চা করে না । এই দুর্লঙ্ঘ্যতায় বেষ্টিত আদিম লোকালয়ে দস্যবৃত্তি ও ঘোর নির্দয়তার মধ্যে মানুষের জীবনযাত্রা আরম্ভ হয়েছিল এবং হিংস্ৰশক্তিকেই নৃত্যে গানে শিল্পকলায় ধর্মানুষ্ঠানে সকলের চেয়ে তারা গৌরব দিয়েছিল । তার পর কখনো দৈবক্রমে কখনো বুদ্ধি খাটিয়ে মানুষ সভ্যতার অভিমুখে আপনার যাত্রাপথ আবিষ্কার করে নিয়েছে। এই দিকে তার প্রথম সহায়-আবিষ্কার আগুন । সেই যুগে আগুনের আশ্চৰ্য্য ক্ষমতাতে মানুষ প্রকৃতির শক্তির যে প্রভাব দেখেছিল, আজও নানা দিকে তার ক্রিয়া চলেছে। আজও আগুন নানা মূর্তিতে সভ্যতার প্রধান বাহন । এই আগুন ছিল ভারতীয় আর্যদের ধর্মানুষ্ঠানের প্রথম মাগি । তার পর এল কৃষি । কৃষির মধ্য দিয়ে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য স্থাপন করেছে। পৃথিবীর গর্ভে যে জননশক্তি প্রচ্ছন্ন ছিল সেই শক্তিকে আহবান করেছে। তার পূর্বে আহার্যের আয়োজন ছিল স্বল্প পরিমাণে এবং দৈবায়ত্ত । তার ভাগ ছিল অল্প লোকের ভোগে, এইজন্য তাতে স্বার্থপরতাকে শান দিয়েছে এবং পরস্পর হানাহানিকে উদ্যত করে রেখেছে। সেই সঙ্গে জাগল ধৰ্মনীতি। কৃষি সম্ভব করেছে জনসমবায় । কেননা, বহু লোক একত্র হলে যা তাদের ধারণ করে রাখতে পারে তাকেই বলে ধর্ম | ভেদবুদ্ধি বিদ্বেষবুদ্ধিকে দমন করে শ্রেয়োবোধ ঐক্যবোধকে জাগিয়ে তোলবার ভার ধর্মের পরে | জীবিকা যত সহজ হয় ততই ধর্মের পক্ষে সহজ হয় গ্ৰীতিমূলক ঐক্যবদ্ধনে বাধা। বস্তুত মানবসভ্যতায় কৃষিই প্রথম পত্তন করেছে সাত্ত্বিকতার ভূমিকা। সভ্যতার সোপানে আগুনের পরেই এসেছে কৃষি । একদিন কৃষিক্ষেত্রে ভূমিকে মানুষ আহবান করেছিল। আপনি সখ্যে, সেই ছিল তার একটা বড়ো যুগ । সেই দিন সখ্যধর্ম মানুষের সমাজে প্রশস্ত স্থান পেয়েছে। ভারতবর্ষে প্রাচীন যুগে আরণ্যক সমাজ শাখায় শাখায় বিভক্ত ছিল। তখন যাগযজ্ঞ ছিল বিশেষ "লের বিশেষ ফললাভের কামনায়। ধনসম্পদ ও শত্রুজয়ের আশায় বিশেষ মন্ত্রের বিশেষ শক্তি কল্পনা *নে তারই সহযোগে বিশেষ পদ্ধতির যজ্ঞানুষ্ঠান তখন গীেরব পেত। কিন্তু যেহেতু এর লক্ষ্য ছিল