পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w) আরম্ভ হয়ে, কী করে আন্ন অর্জন করতে হয়, কী করে চাষ করতে হয়, ফসল ফলাতে হয়, সব বিষয়ে দেশের মধ্যে আত্মনির্ভরতা জাগাতে হবে। কবিকে যখন সভাপতির আসনে বসিয়েছেন তখন আমি বলব এবং এটা বলবার কথা-বসন্তকালের বাঁশি এই-যে সে শুধু একটা ফুলকে জাগিয়ে দেয় না, একটা গাছের পাতাকে ফোটায় না, দখিন-হাওয়ায় পাখিরা জেগে ওঠে, লতাপাতা ফোটে, গাছের ফল ফুল সমস্ত আনন্দ-উৎসবে শক্তির উৎসবে উৎফুল্প ও আনন্দিত হয় । সেই বসন্তের বাণীকে আমি আপনাদের কাছে উপস্থিত করছি । Re (Fifi ya 8 ბ&It) ატტა প্ৰতিভাষণ ময়মনসিংহে জনসাধারণের অভিনন্দনের উত্তরে মহারাজ, ময়মনসিংহের পুরবাসিগণ ও পুরমহিলাগণ, আমি আজ আমার সমস্ত হৃদয় পূর্ণ করে আপনাদের প্রীতিসুধা সম্ভোগ করছি । আমি নিজেকে প্রশ্ন করলুম- তুমি কেন আজকের দিনে পূর্ববঙ্গে ভ্রমণের জন্যে এসেছ, কোন সাহসে তুমি বের হয়েছ ; কী করতে পারো তুমি তোমার হীনশক্তিতে ! এ প্রশ্নের আমার একটা খুবই সহজ উত্তর আছে । তা এই যে, আমি কোনো কাজের দাবি রাখি নে । যদি আমি কোনোদিন আনন্দ দিয়ে থাকি আমার সাহিত্য আমার কাব্যের মধ্য দিয়ে তবে তারই প্রতিদানীন্ত্ররূপ আপনাদের প্রীতির অর্ঘ্য সংগ্ৰহ করে যেতে পাবি । বাংলাদেশ থেকে, শেষ বিদায় গ্ৰহণ করবার পূর্বে এটুকু পুরস্কার যদি নিয়ে যেতে পারি তো সেই আমার সার্থকতা ! আমি কোনো কর্ম করেছি কি না। এ কথার দরকার নেই। আপনাদের এ আতিথ্যের বরমালাই আমার যথেষ্ট । এ খুব সহজ উত্তর, কিন্তু এ উত্তর সম্পূর্ণ সীতা নয় । আর-এক দিন এসেছিল যেদিন সমস্ত বাংলাদেশে মানবের চিত্ত উদবোধিত হয়েছিল। সেদিন আমিও তার মধ্যে ছিলুম- শুধু কবিরূপে নয়- আমি গান রচনা করেছিলুম, কাব্য রচনা করেছিলুম, বাংলাদেশে যে নতুন প্ৰাণের সঞ্চার হয়েছিল সাহিত্যে তারই রূপ প্রকাশ করে দেশকে কিছু দিয়েছিলুম। কিন্তু কেবলমাত্র সেইটুকুই আমার কাজ নয়। একটি কথা সেদিন আমি অনুভব করেছিলুম, দেশের কাছে তা বলেও ছিলাম- সে কথাটি এই যে, যখন সমস্ত দেশের হৃদয় উদবোধিত হয়ে ওঠে তখন কেবলমাত্র ভাবসম্ভোগের দ্বারা সেই মহামুহুর্তগুলি সমাপ্ত করে দেওয়ার মতো অপব্যয় আর কিছু নেই। যখন বর্ষা নাবে তখন কেবলমাত্র বর্ষণের স্নিগ্ধ আনন্দ সম্ভোগেই যথেষ্ট নয়, সে বর্ষণ কৃষককে ডাক দিয়ে বলে- বৃষ্টিকে কাজে লাগাতে হবে । সেদিন আমি এ কথা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলুম- আপনাদের মধ্যে অনেকের তা মনে থাকতে পারে অথবা বিস্মতও হয়ে থাকতে পারেন- 'কাজের সময় এসেছে, ভাবাবেগে চিত্ত অনুকুল হয়েছে। এখনই কর্ম করবার উপযুক্ত সময় । কেবলমাত্র ভাবাবেগ স্থায়ী হতে পারে না। ক্ষণকালের যে ভাবাবেগ তা দেশের সকলের চিত্তকে, সকলের হৃদয়কে সম্মিলিত করতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকেৱ শক্তি ব্যাপ্ত হলে পরই কর্মের সূত্র -দ্বারা যথার্থ ঐক্য স্থাপিত হয়। কর্মের দিন এসেছে।” এই কথা আমি বলেছিলুম সেদিন । কিরাপ কর্ম। বাংলার পল্পী-সব আজ নিরান্ন, নিরানন্দ, তাদের স্বাস্থ্য দূর হয়ে গৈছে- আমাদের তপস্যা করতে হবে সেই পল্লীতে নতুন প্ৰাণ আনবার জন্যে, সেই কাজে আমাদের ব্ৰতী হতে হবে। এ কথা স্মরণ করিয়ে দেবার চেষ্টা আমি করেছিলুম, শুধু কাব্যে ভাব প্রকাশ করিনি । কিন্তু দেশ সে কথা স্বীকার করে নেয় নি সেদিন । আমি যে তখন কেবলমাত্ৰ ভাবুকতার মধ্যে প্রচ্ছন্ন হয়েছিলাম। এ কথা সত্য নয়। তারও আগে, প্রায় ত্রিশ বছর আগেই, আমি পল্লীর কর্মের কথা বলেছিলুম- যে পায়ী বাংলাদেশের প্রশনিকেতন সেইখনেই রয়েছে কর্মের যথার্থক্ষেত্র, সেইখনেই