পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ ՏԵr রবীন্দ্র-রচনাবলী নীরদ আজ কেন অমন বিষন্ন হয়ে আছেন তুই একবার জিজ্ঞাসা করে আয় না ! তুই ওঁর কাছে গিয়ে একটু গান-টান গেয়ে শোনালে উনি ভালো থাকেন। তাই তুই যা, আমি ফুল তুলে নিয়ে যাচ্চি। ফুলি। কাকা, তোমার কী হয়েছে ! নীরদ। কী আর হবে ফুলি ! ফুলি। তবে তুমি অমন করে আছ কেন কাক ? নীরদ । (কোলে টানিয়া লইয়া) কিছুই হয় নি বাছা ! ফুলি । কাকা, তুমি গান শুনবে ? নীরদ । না রে, এখন গান শুনতে বড়ো ইচ্ছে করচে না ! ফুলি। তবে তুমি ফুল নেবে ? নীরদ । আমাকে ফুল কে দেবে ফুলি ? ফুলি । কেন, নলিনী ঐখেনে ফুল তুলচে, ঐদিকে ঢের ফুটেচে- ঐখেনে চল না কেন ? (নলিনীর কাছে টানিয়া লইয়া গিয়া) কাকাকে কতকগুলি ফুল দাও না ভাই, উনি ফুল চাচোন ! নলিনী । তুই কি চোকে দেখতে পাস নে ? দেখ দেখি গাছের তলায় কি ক’রে দিলি ? অমন সুন্দর বকুলগুলি সব মাড়িয়ে দিয়েচিস ! হ্যা হ্যা, ফুলি, আমরা যে সে দিন সেই ঝোপের মধ্যে পাখির বাসায় সেই পাখির ছানাগুলিকে দেখেছিলুম, আজ তাদের চোক ফুটেচে, তারা কেমন পিটুপিট করে চাচ্চে ! তাদের মা খাবার আনতে গেছে, এই বেলা আয়, আমরা তাদের একটি একটি করে ঘাসের ধান श९3रे (? ! ফুলি । কোথায় সে, কোথায় সে, চল না । (উভয়ের দ্রুত গমন) নলিনী । (কিছু দূর গিয়া ফুলির প্রতি) ঐ যা, তোর কাকাকে ফুল দিয়ে আসতে ভুলে গেচি ! তুই ছুটে যা, এই ফুল দুটি তাকে. দিয়ে আয় গে। আমার নাম করিস নে যেন ! ফুলি । (নীরদের কাছে আসিয়া) এই নাও কাকা, ফুল এনেছি। নীরদ । (চুম্বন করিয়া) আমি ভেবেছিলেম আমাকে কেউ ফুল দেবে না । শেষ কালে তোর কাছ থেকে পেলেম ! নলিনী । (দূর হইতে) ফুলি, তুই আবার গেলি কোথায় ? ঝাঁট ক’রে আয় না, বেলা ব’য়ে যায়। ফুলি । এই যাই । (ছুটিয়া যাওন) নীরদ । (স্বগত) এ যেন রূপের ঝড়ের মতো, যেখেন দিয়ে বয়ে যায়। সেখেনে তোলপাড় করে দেয় । এতটা আমি ভালোবাসি নে ! আমার প্রাণ শ্ৰান্ত পাখিটির মতো একটি গাছের ছায়া চায়, প্রচ্ছন্ন সুখের কুলায় চায়। আমি তো এত অধীরতা সইতে পারি নে। একটুখানি বিরাম, একটুখানি শান্তি কোথায় পাব ? (নলিনীর কাছে গিয়া) নলিনী, তুমি আমার একটি কথার উত্তর দেবে না ? নতশিরা নলিনীর স্তব্ধভাবে আঁচলের ফুল-গণনা কখন তুমি আমার সঙ্গে একটি কথা কও নি- আজ তোমাকে বেশী কিছু বলতে হবে না, একবার কেবল আমার নামটি ধরে ডাক, তোমার মুখে একবার কেবল আমার নামটি শোনবার সাধ হয়েছে। আমার এইটুকু সাধও কি মিটবে না? না হয় একবার বলে যে, নী! বলে যে, মিটবে না! বলে যে, তোমাকে আমার ভালো লাগে না, তুমি কেন আমার কাছে কাছে ঘুরে বেড়াও ! আমার এই দুর্বল ক্ষীণ আশাটুকুকে আর কত দিন বঁচিয়ে রাখব ? তোমার একটি কঠিন কথায় তাকে একেবারে বধ করে ফেল, আমার যা হবার হোক । (নলিনীর আঁচল শিথিল হইয়া ফুলগুলি সব পড়িয়া গেল ও নলিনী মাটিতে বসিয়া ধীরে ধীরে একে একে কুড়াইতে লাগিল।) নীরদ । তাও বলবে না ! (নিশ্বাস ফেলিয়া দূরে গমন) ফুলি। (চুটিয়া নলিনীর কাছে আসিয়া) দেখসে, নেবুগাছে একটা মীেচক দেখতে পেয়েছি - ও