পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ ՀՀ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বেহাগড়া— কাওয়ালি মনে রয়ে গেল মনের কথা শুধু চোখের জল, প্রাণের ব্যথা ! মনে করি দুটি কথা বলে যাই, কেন মুখের পানে চেয়ে চলে যাই, সে যদি চাহে মারি যে তাহে কেন মুদে আসে আঁখির পাতা ! স্নান মুখে সখি সে যে চলে যায়, ও তারে ফিরায়ে ডেকে নিয়ে আয়, বুঝিল না সে যে কেঁদে গেল ধুলায় লুটাইল হৃদয়লতা ! [গাইতে গাইতে প্ৰস্থান দ্বিতীয় দৃশ্য গৃহ নবীন । নীরদ বিদেশে যাবার পর থেকে নলিনীর এ কি হ’ল ? সে উল্লাস নেই, সে হাসি নেই। বাগানে তার আর দেখা পাই নে । দিনরাত ঘরের মধ্যেই একলা বসে থাকে । নলিনী নীরদকেই বাস্তবিক ভালোবাসত ! এইটে আর আগে বুঝতে পারি নি! এমনি অন্ধ হয়েছিলেম । নীরদের সমুখে । সে যেন নিজের প্রেমের ভারে নিজে ঢাকা পড়ে যেত ! তাকে ঠিক দেখা যেত না । নীরদের সমুখে সে এমনি অভিভূত হয়ে পড়ত যে আমাদের কাছে পেলে সে যেন আশ্রয় পেত, সে যেন আমাদের পাশে আপনাকে আড়াল ক'রে তাড়াতাড়ি আত্মসংবরণ করতে চেষ্টা করত। নীরদের পূর্ণদৃষ্টির সূর্যালোকে পাছে তার প্রাণের সমস্তটা একেবারে দেখা যায়। এই ভয়ে সে নীরদের সমুখে অস্থির হয়ে পড়ত ; কি ভুলই করেছি! যাই, তাকে একবার খুঁজে আসি গে! আজি তার সে করুণ মুখখানি দেখলে বড়ো মায়া করে। তার মুখের সেই সরল হাসিখানি যেন নিরাশ্রয় হয়ে আমার চােখের সমুখে কেঁদে কেঁদে বেড়াচে ! আবার কবে সে হাসবে ! [প্ৰস্থান নলিনীর গৃহে প্ৰবেশ ও জানালার কাছে উপবেশন নলিনী । (স্বগত) আমাকে একবার বলেও গেলেন না ? আমি তার কি করেছিলেম ? আমাকে যদি তিনি ভালোবাসতেন তবে কি একবার বলে যেতেন না ?