পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

troo রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বহুদিন হইল জর্মন কবিশ্রেষ্ঠ গ্যয়টের কোনো রচনার ইংরেজি তর্জমাতে একটা কথা পড়িয়াছিলাম, যতদূর মনে পড়ে, তাহার ভাবখানা এই যে, বাগানের মধ্যে যে শক্তি গোলাপ হইয়া ফোটে সেই একই শক্তি মানুষের মনে ও বাক্যে কাব্য হইয়া প্ৰকাশ পায় । এই বিশ্বশক্তিকে নিজের জীবনের মধ্যে ও রচনার মধ্যে অনুভব করা অহংকার নহে। বরঞ্চ অহংকারের ঠিক উলটা। কেননা, এই বিশ্বশক্তি কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিশেষ সম্পত্তি নহে, তাহা সকলের মধ্যেই কাজ করিতেছে । তাই যদি হয় তবে এতবড়ো একটা অত্যন্ত সাধারণ কথাকে বিশেষভাবে বলিতে বসা GKON ? , ইহার উত্তর এই যে, অত্যন্ত সাধারণ কথারও যখন জীবনের বিশেষ অবস্থায় বিশেষ উপলব্ধি হয় তখন তাহা আমাদিগকে হঠাৎ একটা আলোকের মতো চমৎকৃত করিয়া দেয় । যাহা সাধারণ তাহাকেই বিশেষ করিয়া যখন জানিতে পাই তখন তাহার বিস্ময় বড়ো বেশি করিয়া আঘাত করে । মৃত্যুর মতো অত্যন্ত বিশ্বব্যাপী নিশ্চিত ও পুরাতন পদার্থেরও বিশেষ পরিচয় আমাদিগকে একটা সদ্যোনূতন আবির্ভাবের মতো চমক লাগাইয়া দেয়। এইজন্য বিশেষ অবস্থায় সাধারণ কথাকেও বিশেষ করিয়া বলিবার আকাঙক্ষা মনে উদয় হইয়া থাকে । বস্তুত সাহিত্যের বারো-আনা কথাই নিতান্ত জানা কথাকেই নিজের মধ্যে নূতন করিয়া জানিয়া নিজের মতো নূতন করিয়া বলা । সম্প্রতি অধ্যাপক কেয়ার্ডের একটি গ্রন্থে পড়িতেছিলাম ; Though man is essentially self-conscious, he always is more than he thinks or knows, and his thinking and knowing are ruled by ideas of which he is at first unaware, but which, nevertheless. affect everything he says or does. Of these ideas we may, therefore, expect to find some indication even in the earliest stage of his development, but we cannot expect that in that stage they will appear in their proper form or be known for what they really are. যে আইডিয়া সম্বন্ধে আমরা প্ৰথমে অচেতন ছিলাম তাহাই যে আমাদিগকে বলাইয়াছে ও করাইয়াছে এবং আমাদের অপরিণত অবস্থারও কথা ও কাজকে আমাদের অজ্ঞাতসারে সেই আইডিয়ারই শক্তি প্রবর্তিত করিয়াছে- আমার ক্ষুদ্র আত্মজীবনীতে এই কথাটার উপলব্ধিকে আমি কোনো-এক রকম করিয়া বলিবার চেষ্টা করিয়াছি । কথাটা সত্য কি মিথ্যা সে কথা স্বতন্ত্র, কিন্তু ইহা অহংকার নহে, কারণ, ইহা কাহারও একলার সামগ্ৰী নহে । তবে কিনা। যখন নানা কারণে নিজের জীবনবিকাশের মধ্যে এই আইডিয়াকে স্পষ্ট করিয়া প্ৰত্যক্ষ করা যায়। তখন তাহাকে নিতান্ত সাধারণ কথা ও জানা কথা বলিয়া আর উপেক্ষা করিতে পারি না । -রবীন্দ্ৰবাবুর বক্তব্য । বঙ্গদর্শন, মাঘ ১৩১৪ “নিজের কথা বলামাত্রের মধ্যেই অহমিকা আছে | আত্মজীবনী লিখতে গেলে সেই আত্মাকে বাদ দিয়ে লেখা চলে না, সেই অনিবাৰ্য অহমিকার জন্যই আমি উক্ত লেখার আরম্ভে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেম— এটাকে ইচ্ছাপূর্বক অহংকার করতে বসে মাপ চাওয়ার বিড়ম্বনা বলে মনে कदम कीं ।” * রবীন্দ্রনাথ । দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে লেখা পত্রের অংশ’, ২৩ বৈশাখ ১৩১২ ১ দ্র, রবীন্দ্রজীবনী ২। (আশ্বিন ১৩৬৮)