পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁশিরি । ృులి যুগে। আজও কচি মনটা রূপকথা জাকড়িয়ে আছে। তাকে হিচড়িয়ে উজোন পথে টানাটানি ক’রে মনের উপরের চামড়াটাকে করে তুলেছ কড়া। দুর্বল বলেই বলের এত বড়াই । ক্ষিতীশ । সে কথা মাথা হেঁট করেই মানব । পুরুষজাত দুর্বল জাত। বাশরি । তোমরা আবার রিয়লিস্ট্র। রিয়লিস্ট্র মেয়েরা। যতবড়ো স্থল পদার্থ হও না, যা তোমরা তাই বলেই জানি তোমাদের । পাকে-ডোবা জলহস্তীকে নিয়ে ঘর যদি করতেই হয় তাকে ঐরাবত বলে রোমান্স বানাই নে। রঙ মাখাই নে তোমাদের মুখে। মাখি নিজে। রূপকথার খোকা সব! ভালো কাজ হয়েছে মেয়েদের ! তোমাদের ভোলানো । পোড়া কপাল আমাদের । এখীনা ! মিনার্ভা ! মরে যাই ! ওগো রিয়লিস্ট্র, রাস্তায় চলতে যাদের দেখেছ পানওয়ালীর দোকানে, গড়েছ কালো মাটির তাল দিয়ে যাদের মূর্তি, তারাই সেজে বেড়াচ্ছে এখীন, মিনর্ভা। ক্ষিতীশ । বাশি, বৈদিককালে ঋষিদের কাজ ছিল মন্তর পড়ে দেবতা ভোলানে— যাদের ভোলাতেন তাদের ভক্তিও করতেন। তোমাদের যে সেই দশা । বোকা পুরুষদের ভোলাও তোমরা, আবার পাদোদক নিতেও ছাড় না। এমনি করেই মাটি করলে এই জাতটাকে । বঁাশরি। সত্যি সত্যি, খুব সত্যি। ঐ বোকাদের আমরাই বসাইটঙের উপরে, চোখের জলে কাদামাখা পা ধুইয়ে দিই, নিজেদের অপমানের শেষ করি, যত ভোলাই তার চেয়ে ভুলি হাজার গুণে । ক্ষিতীশ । এর উপায় ? বঁাশরি। লেখো, লেখো সত্যি করে, লেখো শক্ত করে। মন্তর নয়, মাইথ'লজি নয়, মিনর্ভার মুখোশটা ফেলে দাও টান মেরে। ঠোট লাল করে তোমাদের পানওয়ালী যে মস্তর ছড়ায় ঐ আশ্চর্য মেয়েও ভাষা বদলিয়ে সেই মন্তরই ছড়াচ্ছে । সামনে পড়ল পথ-চলতি এক রাজা, শুরু করলে জাদু। কিসের জন্তে । টাকার জন্তে । শুনে রাখে, টাকা জিনিসটা মাইথলজির নয়, ওটা ব্যাঙ্কের, ওটা তোমাদের রিয়লিজমের কোঠায়। ক্ষিতীশ। টাকার প্রতি দৃষ্টি আছে সেটা তো বুদ্ধির লক্ষণ, সেইসঙ্গে হৃদয়টাও থাকতে পারে । বঁাশরি। আছে গো, হৃদয় আছে। ঠিক জায়গায় খুজলে দেখতে পাবে, পানওয়ালীরও হৃদয় আছে। কিন্তু মুনফা এক দিকে, হৃদয়টা আর-এক দিকে। এইটে যখন আবিষ্কার করবে তখনই জমবে গল্পটা। পাঠিকার ঘোর আপত্তি করবে ; বলবে,