পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ويمانيا (3\ এই শূদ্রপ্রধান ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো দুৰ্গতির যে ছবি দেখতে পাই সেই পরম আক্ষেপের কথাটা বলতে বসেছি। প্রথমবারে যখন জাপানের পথে হংকঙের বন্দরে আমাদের জাহাজ লাগল, দেখলুম সেখানে ঘাটে একজন পাঞ্জাবি পাহারাওয়াল অতি তুচ্ছ কারণে একজন চৈনিকের বেশী ধরে তাকে লাথি মারলে । আমার মাথা হেঁট হয়ে গেল । নিজের দেশে রাজতৃত্যেরলাঞ্ছন-ধারী কর্তৃক স্বদেশীর এরকম অত্যাচার-দুৰ্গতি অনেক দেখেছি, দূর সমুদ্রতীরে গিয়েও তাই দেখলুম। দেশে বিদেশে এরা শুত্রধর্মপালন করছে। চীনকে অপমানিত করবার ভার প্রভুর হয়ে এরা গ্রহণ করেছে, সে সম্বন্ধে এরা কোনো বিচার করতেই চায় না ; কেননা এরা শুত্রধর্মের হাওয়ায় মানুষ। নিমকের সহজ দাবি যতদূর পৌঁছায় এরা সহজেই তাকে বহু দূরে লঙ্ঘন করে যায় ; তাতে আনন্দ পায়, গর্ব বোধ করে। চীনের কাছ থেকে ইংরেজ যখন হংকঙ কেড়ে নিতে গিয়েছিল তখন এরাই চীনকে মেরেছে। চীনের বুকে এদেরই অস্ত্রের চিহ্ন অনেক আছে— সেই চীনের বুকে যে চীন আপন হৃদয়ের মধ্যে ভারতবর্ষের বুদ্ধদেবের পদচিহ্ন ধারণ করেছিল, সেই ইংসিং হিউয়েন্‌সাঙের চীন। মানববিশ্বের আকাশে আজ যুদ্ধের কালো মেঘ চার দিকে ঘনিয়ে এসেছে। এ দিকে প্যাসিফিকের তীরে ইংরেজের তীক্ষচষ্ণু খরনখরদারুণ শু্যেনতরণীর নীড় বাধা হচ্ছে । পশ্চিম মহাদেশে দিকে দিকে রব উঠেছে যে, এসিয়ার অস্ত্রশালায় শক্তিশেল তৈরি চলছে, যুরোপের মর্মের প্রতি তার লক্ষ । রক্তমোক্ষণক্লান্ত পীড়িত এসিয়াও ক্ষণে ক্ষণে অস্থিরতার লক্ষণ দেখাচ্ছে। পূর্বমহাদেশের পূর্বতম প্রাস্তে জাপান জেগেছে, চীনও তার দেওয়ালের চার দিকে সিদ্ধ কাটার শব্দে জাগবার উপক্রম করছে । হয়তো একদিন এই বিরাটকায় জাতি তার বন্ধন ছিন্ন করে উঠে দাড়াতে চেষ্টা করবে, হয়তো একদিন তার আফিমে আবিষ্ট দেহ বহুকালের বিষ ঝেড়ে ফেলে আপনার শক্তি উপলব্ধি করতে পারবে। চীনের থলিবুলি যারা ফুটাে করতে লেগেছিল তার চীনের এই চৈতন্তলাভকে যুরোপের বিরুদ্ধে অপরাধ বলেই গণ্য করবে। তখন এসিয়ার মধ্যে এই শূদ্র ভারতবর্ষের কী কাজ। তখন সে যুরোপের কামারশালায় তৈরি লোহার শিকল কাধে করে নির্বিচারে তার প্রাচীন বন্ধুকে বাধতে যাবে। সে মারবে, সে মক্কবে । কেন মারবে, কেন মরবে, এ কথা প্রশ্ন করতে তার ধর্মে নিষেধ। সে বলবে : স্বধর্মে হননং শ্রেয়ঃ, স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ । ইংরেজ-সাম্রাজ্যের কোথাও সে সম্মান চায়ও না পায়ও না— ইংরেজের হয়ে লে কুলিগিরির বোঝা বয়ে মরে, যে বোঝার মধ্যে তার অর্থ নেই, পরমার্থ নেই ; ইংরেজের হয়ে পরকে সে তেড়ে মারতে যায়, যে পর তার