পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালাস্তর \e) কারও মেলবার উপায় নেই। আমাদের মানসপ্রকৃতির মধ্যে যে অবরোধ রয়েছে তাকে ঘোচাতে না পারলে আমরা কোনোরকমের স্বাধীনতাই পাব না । শিক্ষার দ্বারা, সাধনার দ্বারা সেই মূলের পরিবর্তন ঘটাতে হবে— ডানার চেয়ে খাচা বড়ো এই সংস্কারটাকেই বদলে ফেলতে হবে— তার পরে আমাদের কল্যাণ হতে পারবে। হিন্দু-মুসলমানের মিলন যুগপরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু এ কথা শুনে ভয় পাবার কারণ নেই ; কারণ অন্ত দেশে মানুষ সাধনার দ্বারা যুগপরিবর্তন ঘটিয়েছে, গুটির যুগ থেকে ডানা-মেলার যুগে বেরিয়ে এসেছে। আমরাও মানসিক অবরোধ কেটে বেরিয়ে আসব ; যদি না আসি তবে, নান্তঃপন্থা বিদ্যতে অয়নায় । ইতি ৭ই আষাঢ়, ১৩২৯ নারী মানুষের স্বষ্টিতে নারী পুরাতনী । নরসমাজে নারীশক্তিকে বলা যেতে পারে আদ্যাশক্তি। এই সেই শক্তি যা জীবলোকে প্রাণকে বহন করে, প্রাণকে পোষণ করে। পৃথিবীকে জীবের বাসযোগ্য করবার জন্তে অনেক যুগ গেছে ঢালাই-পেটাই করা মিস্ত্রির কাজে । সেটা আধখানা শেষ হতে না-হতেই প্রকৃতি শুরু করলেন জীবস্থাই, পৃথিবীতে এল বেদন । প্রাণসাধনার সেই আদিম বেদনা প্রকৃতি দিয়েছেন নারীর রক্তে, নারীর হৃদয়ে । জীবপালনের সমস্ত প্রবৃত্তিজাল প্রবল করে জড়িত করেছেন নারীর দেহমনের তত্ত্বতে তন্তুতে। এই প্রবৃত্তি স্বভাবতই চিত্তবৃত্তির চেয়ে হৃদয়বৃত্তিতেই স্থান পেয়েছে গভীর ও প্রশস্ত ভাবে। এই সেই প্রবৃত্তি নারীর মধ্যে ষ। বন্ধনজাল গাখছে নিজেকে ও অন্তকে ধরে রাখবার জন্তে প্রেমে, স্নেহে, সকরুণ ধৈর্ষে । মানবসংসারকে গড়ে তোলবার, বেঁধে রাখবার এই আদিম বাধুনি। এই সেই সংসার যা সকল সমাজের সকল সভ্যতার মূলভিত্তি। সংসারের এই গোড়াকার বাধন না থাকলে মানুষ ছড়িয়ে পড়ত আকারপ্রকারহীন বাম্পের মতো ; সংহত হয়ে কোথাও মিলনকেন্দ্র স্থাপন করতে পারত না । সমাজবন্ধনের এই প্রথম কাজটি মেয়েদের । প্রকৃতির সমস্ত স্বষ্টিপ্রক্রিয়া গভীর গোপন, তার স্বতঃপ্রবর্তন দ্বিধাবিহীন। সেই আদিপ্রাণের সহজ প্রবর্তন নারীর স্বভাবের মধ্যে। সেইজন্ত নারীর স্বভাবকে মানুষ রহস্যময় আখ্যা দিয়েছে। তাই অনেক সময়ে অকস্মাৎ নারীর জীবনে যে সংবেগের উচ্ছ্বাস দেখতে পাওয়া যায় তা তর্কের অতীত— তা প্রয়োজন-অনুসারে বিধিপূর্বক