পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ა თ রবীন্দ্র-রচনাবলী বৃহৎভাবে কাজে খাটানো অনেক চেষ্টায়, অনেক পরীক্ষায়, অনেক ব্যর্থতার ভিতর দিয়ে গিয়ে তবে অনেক দিনে যদি সম্ভব হয় । কথাটা শক্ত বই-কি। কোনো বড়ো সামগ্রীই সন্তা দামে পাওয়া যায় না। দুর্লভ জিনিসের মুখসাধ্য পথকেই বলে ফাকির পথ । চরকায় স্বরাজ পাওয়া যায়, এ কথা অনেকে বলছেন, অনেকে বিশ্বাসও করছেন, কিন্তু যিনি স্পষ্ট করে বুঝেছেন এমন লোকের সঙ্গে আজও আমার দেখা হয় নি। কাজেই তর্ক চলে না ; দেশে তর্ক চলছেও না, রাগারাগি চলছে। র্যারা তর্কে নামেন তারা হিসাব করে দেখিয়ে দেন, কত চরকায় কত পরিমাণ সুতো হয়, আর কত স্থতোয় কতটা পরিমাণ খদ্দর হতে পারে। অর্থাৎ, তাদের হিসাব-মতে দেশে এতে কাপড়ের দৈন্ত কিছু ঘুচবে। তা হলে গিয়ে ঠেকে দৈন্ত দূর করার কথায়। কিন্তু, দৈন্ত জিনিসটা জটিল মিশ্র জিনিস। আর, এ জিনিসটার উৎপত্তির কারণ আছে আমাদের জ্ঞানের অভাবে, বুদ্ধির ক্রটিতে, প্রথার দোষে ও চরিত্রের দুর্বলতায় । মানুষের সমস্ত জীবনযাত্রাকে এক করে ধরে তবে ভিতরে বাহিরে এর প্রতিকার করা যেতে পারে। কাজেই প্রশ্ন কঠিন হলে তার উত্তরটা সহজ হতে পারে না। যদি গোরা ফৌজ কামান বন্দুক দিয়ে আক্রমণ করে, তবে দিশি সেপাই তীর ধনুক দিয়ে তাদের ঠেকাতে পারে না। কেউ কেউ বলেছেন, কেন পারবে না। দেশস্থদ্ধ লোক মিলে গোরাদের গায়ে যদি থুথু ফেলে তবে কামান বন্দুক সমেত তাদের ভাসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এই থুথু-ফেলাকে বলা যেতে পারে দুঃখগম্য তীর্থের মুখসাধ্য পথ । আধুনিক কালের বিজ্ঞানাভিমানী যুদ্ধপ্রণালীর প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের পক্ষে এমন নিখুত অথচ সরল উপায় আর নেই, এ কথা মানি। আর এও না হয় আপাতত মেনে নেওয়া গেল যে, এই উপায়ে সরকারি খুংকারপ্লাবনে গোরাদের ভাসিয়ে দেওয়া অসম্ভব নয় ; তবু মানুষের চরিত্র যারা জানে তারা এটাও জানে যে, তেত্রিশ কোটি লোক একসঙ্গে থুথু ফেলবেই না। দেশের দৈন্ত-সমুদ্র সেঁচে ফেলবার উদ্দেশে চরকাচালনা সম্বন্ধেও ঐ কথা বলা চলে । আয়র্লণ্ডে সার হরেস প্ল্যাস্কেট যখন সমবায়জীবিকা-প্রবর্তনে প্রথম লেগেছিলেন তখন কত বাধা কত ব্যর্থতার ভিতর দিয়ে গিয়েছিলেন, কত নূতন নূতন পরীক্ষা তাকে করতে হয়েছিল ; অবশেষে বহু চেষ্টার পরে সফলতার কিরকম শুরু হয়েছে National Being বই পড়লে তা বোঝা যাবে। আগুন ধরতে দেরি হয়, কিন্তু যখন ধরে তখন ছড়িয়ে যেতে বিলম্ব হয় না। শুধু তাই নয়, আসল সত্যের স্বরূপ এই যে, তাকে যে দেশের যে কোণেই পাওয়া ও প্রতিষ্ঠিত করা যায় সকল দেশেরই সমস্যা সে সমাধান করে। সার হরেস প্ল্যাঙ্কেট যখন আয়র্লণ্ডে সিদ্ধিলাভ করলেন তখন তিনি একই কালে