পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ২৩৫ ক্ষান্তমণি । এই দেখো । এই চাবির মধ্যে ওঁর যথাসর্বস্ব আছে । আজ সকালে একবার খোজ পড়েছিল, কোথাও সন্ধান না পেয়ে শেবে উমাপতিদের বাড়ি থেকে সতেরোটা টাকা ধার করে নিয়ে এলেন । দাও তো ভাই, এ চাবি ওঁকে সহজে দেওয়া হবে না। ওই ভাই, ওরা আসছে— চলো ও ঘরে পালাই । [ প্রস্থান বিনোদ, চন্দ্রকান্ত, নিমাই, নলিনাক্ষ, শ্ৰীপতি ও ভূপতির প্রবেশ বিনোদবিহারী । ( টোপর পরিয়া ) সং তো সাজলুম, এখন তোমরা পাঁচজনে মিলে হাততালি দাও— উৎসাহ হোক, নইলে থেকে থেকে মনটা দমে যাচ্ছে । চন্দ্রকান্ত । এখন তো কেবল নেপথ্যবিধান চলছে, আগে অভিনয় আরম্ভ হোক তার পরে হাততালি দেবার সময় হবে । বিনোদবিহারী । আচ্ছা চন্দর, অভিনয়টা হবে কিসের বলে তো হে | কী সাজব আমাকে বুঝিয়ে দাও দেখি । চন্দ্রকান্ত । মহারানীর বিদূষক সাজতে হবে আর কী । যাতে তিনি একটু প্রফুল্প থাকেন আজ রাত্রি থেকে এই তোমার একমাত্র কাজ হল । বিনোদবিহারী । তা সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে। এই টোপরটা দেখলে মনে পড়ে সেকেলে ইংরেজ রাজাদের যে “ফুল”গুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই আকারের। চন্দ্রকান্ত । সেজের বাতি নিবিয়ে দেবার ঠোঙাগুলোরও ওই রকম চেহারা । এই পচিশটা বৎসর যা কিছু শিক্ষাদীক্ষা হয়েছে, যা কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা জন্মেছিল,— ভারতের ঐক্য, বাণিজ্যের উন্নতি, সমাজের সংস্কার, সাহেবের ছেলে পিটোনো প্রভৃতি যে-সকল উচু উচু ভাবের পলতে মগজের ঘি খেয়ে খুব উজ্জল হয়ে জলে উঠেছিল, সেগুলিকে ওই টােপরটা চাপা দিয়ে এক দমে নিবিয়ে সম্পূর্ণ ঠাও হয়ে বসতে হবে— নলিনাক্ষ । আর আমাদেরও মনে থাকবে না— একেবারে ভুলে যাবে— দেখা করতে এলে বলবে সময় নেই— - চন্দ্রকান্ত । কিংবা মহারানীর হুকুম নেই। কিন্তু সেটা তোমার ভারি ভুল। বন্ধুত্ব তখন আরো প্রগাঢ় হয়ে উঠবে। ওঁর জীবনের মধ্যাহ্নস্থৰটি যখন ঠিক ব্রহ্মরন্থের উপর বা বা করতে থাকবেন তখন এই কালো কালো ছায়াগুলিকে নিতান্ত খারাপ লাগবে না । কিন্তু দেখ বিনোদ, কিছু মনে করিসনে— আরম্ভেতে একটুখানি দমিয়ে দেওয়া ভালো— তা হলে আসল ধাক্কা সামলাবার বেলায় নিতান্ত অসহ বোধ হৰে না। তখন মনে হবে, চন্দর যতটা ভয় দেখাত আসলে ততটা কিছু নয়। সে