পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२68 রবীন্দ্র-রচনাবলী কর না, আমিই তোর স্বামী । আমি তোকে যত যত্ন করব, যত ভালোবাসব, তোর সাতগও গোফদাড়ি তেমন পারবে না । কমলমুখী । আসলে জানিস ইন্দু, ওদের না হলে আমাদের চলতে পারে কিন্তু আমাদের না হলে পুরুষমানুষের চলে না, সেই জন্তে ওদের আমরা ভালোবাসি। ওরা নিজের যত্ব নিজে করতে জানে না— ওদের সর্বদা সামলে রাখবার এবং দেখবার লোক একজন চাই। মনে হয় যেন আমাদের চেয়ে ওদের ঢের বেশি জিনিসের দরকার, ওদের মস্ত শরীর, মস্ত খিদে, মস্ত আবদার । . আমাদের সব তাতেই চলে যায়, ওদের একটু কিছু হলেই একেবারে অস্থির হয়ে পড়ে । আমাদের মতে ওদের এমন মনের জোর নেই—ওরা এত সহ করতে পারে না । সেই জন্তেই তো ওদের এতটা বেশি ভালোবাসতে হয়, নইলে ওদের কী দশা হত । নিবারণের প্রবেশ নিবারণ। মা, তোমাকে দেখলে আমি চোখের জল রাখতে পারিনে । আমার মার কাছে আমি অপরাধী— তোমার কাছে আমার দাড়ানো উচিত হয় না । কমলমুখী। কাক, আপনি অমন করে বলবেন না, আমার অদৃষ্টে যা ছিল ङांई श्रब्रह्छ् ইন্দুমতী । বাবা, আসলে যার অপরাধ তাকে কিছু না বলে তার অপরাধ তোমরা পাচ জনে কেন ভাগ করে নিচ্ছ আমি তো বুঝতে পারিনে। নিবারণ। থাকৃ মা, সে-সব আলোচনা থাকৃ— এখন একটা কাজের কথা বলি, কমল, মন দিয়ে শোনো । তোমাকে এতদিন গরিবের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়ে এসেছি, সে-কথাটা ঠিক নয় । তোমার বাপের বিষয়সম্পত্তি নিতান্ত সামান্ত ছিল না— আমারই হাতে সে সমস্ত আছে– ইতিমধ্যে অনেক টাকা জমেছে এবং স্বদেও বেড়েছে। তোমার বাপ বলে গিয়েছিলেন তোমার কুড়ি বৎসর বয়স হলে তবে এই সমস্ত বিষয়সম্পত্তি তোমার হাতে দেওয়া হয়। র্তার আশঙ্কা ছিল পাছে তোমার বিষয়ের লোভে কেউ তোমাকে বিবাহ করে, তার পরে মদ খেয়ে অসৎ ব্যয় করে উড়িয়ে দেয় ! তোমার বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে বিষয় পেলে তুমি তার ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবে। যদিও তোমার সে বয়স হয়নি, কিন্তু স্ববুদ্ধিতে তোমার সমান আর কে আছে মা ! অতএব তোমার সমস্ত বিষয় তুমি এখনই নাও । খুব সম্ভব তা হলে তোমার স্বামীও তোমার কাছে আপনি এসে ধরা দেবে।