পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি ఇవిసె অন্নপূর্ণ কাতর হইয়া কহিলেন, “দিদি, তোমার বউকে তুমি শিক্ষা দিবে, শাসন করিবে, আমাকে কেন বলিতেছ।” রাজলক্ষ্মী ধতুষ্টংকারের মতো বাজিয়া উঠিলেন, “আমার বউ ? তুমি মন্ত্রী থাকিতে সে আমাকে গ্রাহ করিবে ।” তখন অন্নপূর্ণ সশস্বাপদক্ষেপে দম্পতিকে সচকিত সচেতন করিয়া মহেন্দ্রের শয়নগৃহে উপস্থিত হইলেন। আশাকে কহিলেন, “তুই এমনি করিয়া আমার মাথা হেঁট করিবি পোড়ারমুখী ? লজ্জা নাই, শরম নাই, সময় নাই, অসময় নাই, বৃদ্ধা শাশুড়ীর উপর সমস্ত ঘরকন্ন চাপাইয়া তুমি এখানে আরাম করিতেছ? আমার পোড়াকপাল, আমি তোমাকে এই ঘরে আনিয়াছিলাম !” বলিতে বলিতে র্তাহার চোখ দিয়া জল ঝরিয়া পড়িল— আশাও নতমুখে বস্ত্রাঞ্চল খুটিতে খুটিতে নিঃশব্দে দাড়াইয়া কাদিতে লাগিল । মহেন্দ্ৰ কহিল, “কাকী, তুমি বউকে কেন অন্যায় ভৎসনা করিতেছ। আমিই তো উহাকে ধরিয়া রাখিয়াছি।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “সে কি ভালো কাজ করিয়াছ ? ও বালিকা, অনাথ, মার কাছ হইতে কোনোদিন কোনো শিক্ষা পায় নাই, ও ভালোমন্দর কী জানে। তুমি উহাকে কী শিক্ষা দিতেছ ?” মহেন্দ্র কহিল, “এই দেখো, উহার জন্যে স্লেট, খাতা, বই কিনিয়া আনিয়াছি। আমি বউকে লেখাপড়া শিখাইব, তা লোকে নিন্দাই করুক, আর তোমরা রাগই কর।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “তাই কি সমস্ত দিনই শিখাইতে হইবে । সন্ধ্যার পর এক-আধ ঘণ্টা পড়ালেই তো ঢের হয় ।” মহেন্দ্র । অত সহজ নয়, কাকী—পড়াশুনায় একটু সময়ের দরকার হয়। অন্নপূর্ণ বিরক্ত হইয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। আশাও ধীরে ধীরে তাহার অনুসরণের উপক্রম করিল— মহেন্দ্র দ্বার রোধ করিয়া দাড়াইল— আশার করুণ সজল নেত্রের কাতর অনুনয় মানিল না। কহিল, “রোসো, ঘুমাইয়া সময় নষ্ট করিয়াছি, সেটা পোষাইয়া লইতে হইবে।” এমন গম্ভীরপ্রকৃতি প্রদ্ধেয় মূঢ় থাকিতেও পারেন যিনি মনে করিবেন, মহেন্দ্র নিদ্রাবেশে পড়াইবার সময় নষ্ট করিয়াছে ; বিশেষরূপে তাহাদের অবগতির জন্য বলা আবশ্বক যে, মহেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে অধ্যাপন-কার্ব যেরূপে নির্বাহ হয়, কোনো স্কুলের ইনস্পেক্টর তাহার অনুমোদন করিবেন না ।