পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি । \S)e\రి وانا একদিন নববর্ষার বর্ষণমুখরিত মেঘাচ্ছন্ন সায়াহ্নে গায়ে একখানি স্থবাসিত ফুরফুরে চাদর এবং গলায় একগাছি জুইফুলের গোড়ে মালা পরিয়া মহেন্দ্র আনন্দমনে শয়নগৃহে প্রবেশ করিল। হঠাৎ আশাকে বিস্ময়ে চকিত করিবে বলিয়া জুতার শব্দ করিল না। ঘরে উকি দিয়া দেখিল, পুবদিকের খোলা জানালা দিয়া প্রবল বাতাস বৃষ্টির ছাট লইয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে, বাতাসে দ্বীপ নিবিয়া গেছে এবং আশা নিচের বিছানার উপরে পড়িয়া অব্যক্তকণ্ঠে কাদিতেছে । মহেন্দ্র দ্রুতপদে কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কী হইয়াছে।” বালিকা দ্বিগুণ আবেগে কাদিয়া উঠিল। অনেকক্ষণ পরে মহেন্দ্র ক্রমশ উত্তর পাইল যে, মাসিমা আর সহ করিতে না পারিয়া তাহার পিসতুত ভাইয়ের বাসায় চলিয়া গেছেন । মহেন্দ্র রাগিয়া মনে করিল, “গেলেন যদি, এমন বাদলার সন্ধ্যাটা মাটি করিয়া গেলেন ।” শেষকালে সমস্ত রাগ মাতার উপরে পড়িল । তিনিই তো সকল অশান্তির মূল । মহেন্দ্ৰ কহিল, "কাকী যেখানে গেছেন, আমরাও সেইখানে যাইব, দেখি, মা কাহাকে লইয়া ঝগড়া করেন।” o t বলিয়া অনাবশুক শোরগোল করিয়া জিনিসপত্র বাধাবাধি মুটে-ডাকাডাকি শুরু করিয়া দিল । - o or রাজলক্ষ্মী সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিলেন । ধীরে ধীরে মহেন্দ্রের কাছে আসিয়া শান্তস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় যাইতেছিস ।” - মহেন্দ্র প্রথমে কোনো উত্তর করিল না। দুই-তিনবার প্রশ্নের পর উত্তর করিল, “কাকীর কাছে যাইব ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “তোদের কোথাও যাইতে হইবে না, আমিই তোর কাকীকে আনিয়া দিতেছি ।” বলিয়া তৎক্ষণাৎ পালকি চড়িয়া অন্নপূর্ণার বাসায় গেলেন । গলায় কাপড় দিয়া জোড়হাত করিয়া কহিলেন, “প্রসন্ন হও মেজবউ, মাপ করো ।” অন্নপূর্ণ শশব্যস্ত হইয়া রাজলক্ষ্মীর পায়ের ধুলা লইয়া কাতরম্বরে কহিলেন, “দিদি, কেন আমাকে অপরাধী করিতেছ। তুমি যেমন আজ্ঞা করিবে তাই করিব।” і й