পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ (...) রবীন্দ্র-রচনাবলী এ সময়ে পলায়ন ছাড়া পরিভ্ৰাণ নাই, বিচ্ছেদ ছাড়া ঔষধ নাই। স্ত্রীলোকের স্বভাবসিদ্ধ সংস্কারবশে আশা আজকাল মহেন্দ্রকে ফেলিয়া যাইবার চেষ্টা করিত। কিন্তু বিনোদিনী ছাড়া তাহার যাইবার স্থান কোথায় । মহেন্দ্র প্রণয়ের উত্তপ্ত বাসরশয্যার মধ্যে চক্ষু উন্মীলন করিয়া ধীরে ধীরে সংসারের কাজকর্ম পড়াশুনার প্রতি একটু সজাগ হইয়া পাশ ফিরিল। ডাক্তারি বইগুলাকে নানা অসম্ভব স্থান হইতে উদ্ধার করিয়া ধুলা ঝাড়িতে লাগিল এবং চাপকান পাণ্টলুন-কয়টা রৌদ্রে দিবার উপক্রম করিল। ১৩ বিনোদিনী যখন নিতান্তই ধরা দিল না তখন আশার মাথায় একটা ফন্দি আসিল । সে বিনোদিনীকে কহিল, ”ভাই বালি, তুমি আমার স্বামীর সম্মুখে বাহির হও না কেন । পলাইয়া বেড়াও কী জন্য ।” বিনোদিনী অতি সংক্ষেপে এবং সতেজে উত্তর করিল, “ছি ছি।” আশা কহিল, “কেন। মার কাছে শুনিয়াছি, তুমি তো আমাদের পর নও।” বিনোদিনী গম্ভীরমুখে কহিল, "সংসারে আপন-পর কেহই নাই। যে আপন মনে করে সেই আপন— যে পর বলিয়া জানে, সে আপন হইলেও পর ।” আশা মনে মনে ভাবিল, “এ-কথার আর উত্তর নাই। বাস্তবিকই তাহার স্বামী বিনোদিনীর প্রতি অন্যায় করেন, বাস্তবিকই তাহাকে পর ভাবেন এবং তাহার প্রতি অকারণে বিরক্ত হন ।” সেদিন সন্ধ্যাবেলায় আশা স্বামীকে অত্যন্ত আবদার করিয়া ধরিল, “আমার চোখের বালির সঙ্গে তোমাকে আলাপ করিতে হইবে।” মহেন্দ্র হাসিয়া কহিল, “তোমার সাহস তো কম নয় ।” আশা জিজ্ঞাসা করিল, “কেন, ভয় কিসের ।” মহেন্দ্র । তোমার সর্থীর যে-রকম রূপের বর্ণনা কর, সে তো বড়ো নিরাপদ জায়গা নয় । আশা কহিল, ”আচ্ছ, সে আমি সামলাইতে পারিব । তুমি ঠাট্ট রাখিয়া দাও— তার সঙ্গে আলাপ করিবে কিনা বলে ।” t বিনোদিনীকে দেখিবে বলিয়া মহেন্দ্রের যে কৌতুহল ছিল না, তাহা নহে। এমন কি, আজকাল তাহাকে দেখিবার জন্য মাঝে মাঝে আগ্রহও জন্মে। সেই অনাবশ্যক আগ্রহটা তাহার নিজের কাছে উচিত বলিয়া ঠেকে নাই ।