পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२७ ।। রবীন্দ্র-রচনাবলী নিরুত্তরে মহেঞ্জের মুখের দিকে চাহিয়া হাসিল— কহিল, “বোঠান, লক্ষণ ভালো নয় । এ-সব ভোলাইবার কথা । তোমার চোখের বালিকে আমি দেখিয়াছি । আরো যদি ঘন ঘন দেখিতে পাই, তবে সেটাকে দুর্ঘটনা বলিয়া মনে করিব না, সে অামি শপথ করিয়া বলিতে পারি। কিন্তু মহিনদা যখন এত করিয়া বেকবুল যাইতেছেন তখন বড়ো সন্দেহের কথা ।” মহেন্দ্রের সঙ্গে বিহারীর যে অনেক প্রভেদ, আশা তাহার আর-একটি প্রমাণ । *ांझेल । হঠাৎ মহেঞ্জের ফোটোগ্রাফ-অভ্যাসের শখ চাপিল। পূর্বে সে একবার ফোটোগ্রাফি শিখিতে আরম্ভ করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছিল। এখন আবার ক্যামেরা মেরামত করিয়া আরক কিনিয়া ছবি তুলিতে শুরু করিল। বাড়ির চাকর-বেহারাদের পর্যন্ত ছবি তুলিতে লাগিল । আশা ধরিয়া পড়িল, চোখের বালির একটা ছবি লইতেই হইবে । মহেন্দ্র অত্যন্ত সংক্ষেপে বলিল, “আচ্ছা ।” চোখের বালি তদপেক্ষা সংক্ষেপে বলিল, “না।” আশাকে আবার একটা কৌশল করিতে হইল এবং সে কৌশল গোড়া হইতেই বিনোদিনীর অগোচর রহিল না । মতলব এই হইল, মধ্যাহ্নে আশা তাহাকে নিজের শোবার ঘরে আনিয়া কোনোমতে ঘুম পাড়াইবে এবং মহেন্দ্র সেই অবস্থার ছবি তুলিয়া অবাধ্য সখীকে উপযুক্তরূপ জবা করিবে । மு আশ্চর্ষ এই, বিনোদিনী কোনোদিন দিনের বেলায় ঘুমায় না। কিন্তু আশার ঘরে আসিয়া সেদিন তাহার চোখ চুলিয়া পড়িল । গায়ে একখানি লাল শাল দিয়া খোলা জানালার দিকে মুখ করিয়া হাতে মাথা রাখিয়া এমনই সুন্দর ভঙ্গিতে ঘুমাইয়া পড়িল ষে মহেন্দ্ৰ কহিল, “ঠিক মনে হইতেছে, যেন ছবি লইবার জন্য ইচ্ছা করিয়াই প্রস্তুত হইয়াছে।” মহেন্দ্র পা টিপিয়া টিপিয়া ক্যামের আনিল । কোন দিক হইতে ছবি লইলে ভালো হইবে, তাহা স্থির করিবার জন্য বিনোদিনীকে অনেক ক্ষণ ধরিয়া নানাদিক হইতে বেশ করিয়া দেখিয়া লইতে হইল । এমন কি, আর্টের খাতিরে অতি সস্তপণে শিয়রের কাছে তাহার খোলা চুল এক জায়গায় একটু সরাইয়া দিতে হইল— পছন্দ না হওয়ায় পুনরায় তাহা সংশোধন করিয়া লইতে হইল। আশাকে কানে কানে কহিল, “পায়ের কাছে শালটা একটুখানি ই-দিকে সরাইয়া দাও।”