পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૧ના রবীন্দ্র-রচনাবলী আছে । মশারিতে গোলাপি রেশমের ঝালর লাগানো। নিচের বিছানায় শুভ্র জাজিম ভকতক করিতেছে এবং তাহার উপরে পূর্বেকার পুরাতন তাকিয়ার পরিবর্তে রেশম ও পশমের ফুলকাটা বিলাতি চৌকা বালিশ স্থসজ্জিত। তাহার কারুকার্য বিনোদিনীর বহুদিনের পরিশ্রমজাত । আশা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিত, "এগুলি তুই কার জন্যে তৈরি করিতেছিস, ভাই ।” বিনোদিনী হাসিয়া বলিত, “আমার চিতাশয্যার জন্য । মরণ ছাড়া তো সোহাগের লোক আমার আর কেহই নাই ।” দেয়ালে মহেন্দ্রের যে বাধানো ফোটোগ্রাফখানি ছিল, তাহার ফ্রেমের চার কোণে রঙিন ফিতার দ্বারা স্থনিপুণভাবে চারিটি গ্রন্থি বাধা, এবং সেই ছবির নিচে ভিত্তিগাত্রে একটি টিপাইয়ের দুই ধারে দুই ফুলদানিতে ফুলের তোড়া, যেন মহেন্দ্রের প্রতিমূতি কোনো অজ্ঞাত ভক্তের পূজা প্রাপ্ত হইয়াছে। সবস্থদ্ধ সমস্ত ঘরের চেহারা অন্যরকম। খাট যেখানে ছিল, সেখান হইতে একটুখানি সরানো। ঘরটিকে দুই ভাগ করা হইয়াছে ; থাটের সম্মুখে দুটি বড়ো আলনায় কাপড় ঝুলাইয়া দিয়া আড়ালের মতো প্রস্তুত হওয়ায় নিচে বসিবার বিছানা ও রাত্রে শুইবার খাট স্বতন্ত্র হইয় গেছে। যে আলমারিতে আশার সমস্ত শপের জিনিস চীনের খেলনা প্রভৃতি সাজানো ছিল, সেই আলমারির কাচের দরজায় ভিতরের গায়ে লাল সালু কুঞ্চিত করিয়া মারিয়া দেওয়া হইয়াছে ; এখন আর তাহার ভিতরের কোনো জিনিস দেখা যায় না। ঘরের মধ্যে তাহার পূর্ব-ইতিহাসের যে-কিছু চিহ্ন ছিল, তাহ নূতন হস্তের নব সজ্জায় সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন হইয়া গেছে । পরিশ্রাস্ত মহেন্দ্র মেঝের উপরকার শুভ্র বিছানায় শুইয়া নূতন বালিশগুলির উপর মাথা রাখিবামাত্র একটি মৃদু স্বগন্ধ অনুভব করিল— বালিশের ভিতরকার তুলার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে নাগকেশর ফুলের রেণু ও কিছু আতর মিশ্রিত ছিল । মহেঞ্জের চোখ বুজিয়া আসিল, মনে হইতে লাগিল, এই বালিশের উপর যাহার নিপুণ হস্তের শিল্প, তাহারই কোমল চম্পক-অঙ্গুলির যেন গন্ধ পাওয়া যাইতেছে । * এমন সময় দাসী রুপার রেকাবিতে ফল ও মিষ্ট, এবং কাচের গ্লাসে বরফ-দেওয়া আনারসের শরবত আনিয়া দিল । এ-সমস্তই পূর্বপ্রথা হইতে কিছু বিভিন্ন এবং বহু যত্ব ও পরিপাট্যের সহিত রচিত। সমস্ত স্বাদে গন্ধে দৃশ্যে নূতনত্ব আসিয়া মহেক্সের ইন্দ্ৰিয়সকল আবিষ্ট করিয়া তুলিল । 醇 তৃপ্তিপূর্বক ভোজন সমাধা হইলে, রুপার বাটায় পান ও মশলা লইয়া বিনোদিনী ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করিল। হাসিতে হাসিতে কহিল, “এ-কয়দিন তোমার