পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8$రి আকাশের দিকে চাহিয়া রহিল, ঠোঁটে ঠোট চাপিয়া রহিল, পাছে চোখ দিয়া জল বাহির হইয়া পড়ে । বিনোদিনী থমকিয়া দাড়াইয়া একবার আশাকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল । মনে মনে কহিল, “ও, বুঝিয়াছি। কাল রাত্রের বিবরণ তবে জানিতে পারিয়াছ । আমার উপরেই সমস্ত রাগ | যেন অপরাধ আমারই ।” n বিনোদিনী আশার সঙ্গে কথাবার্তা কহিবার কোনো চেষ্টাই করিল না। খানকয়েক কাপড় বাছিয়া লইয়া দ্রুতপদে ঘর হইতে চলিয়া গেল । বিনোদিনীর সঙ্গে আশা যে এতদিন সরলচিত্তে বন্ধুত্ব করিয়া আসিতেছে, সেই লজ্জা নিদারুণ দুঃখের মধ্যেও তাহার হৃদয়ে পুঞ্জীকৃত হইয়া উঠিল । তাহার মনের মধ্যে সর্থীর যে-আদর্শ ছিল, সেই আদর্শের সঙ্গে নিষ্ঠুর চিঠিখানা আর-একবার মিলাইয়া দেখিবার ইচ্ছা হইল । চিঠিখানা খুলিয়া দেখিতেছে, এমন সময় তাড়াতাড়ি মহেন্দ্র ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। হঠাৎ কী মনে করিয়া কলেজের একটা লেকচারের মাঝখানে ভঙ্গ দিয়া সে ছুটিয়া বাড়ি চলিয়া আসিয়াছে। আশা চিঠিখানা অঞ্চলের মধ্যে লুকাইয়া ফেলিল। মহেন্দ্রও ঘরে আশাকে দেখিয়া একটু থমকিয়া দাড়াইল । তাহার পর ব্যগ্রদূষ্টিতে ঘরের এদিক-ওদিক চাহিয়া দেখিতে লাগিল। আশা বুঝিয়াছিল, মহেন্দ্র কী খুজিতেছে ; কিন্তু কেমন করিয়া সে হাতের চিঠিখানা অলক্ষিতে যথাস্থানে রাখিয়া পালাইয়া ষাইবে, ভাবিয়া পাইল না। মহেন্দ্র তখন একটা একটা করিয়া ময়লা কাপড় তুলিয়া তুলিয়া দেখিতে লাগিল । মহেন্দ্রের সেই নিষ্ফল প্রয়াস দেখিয়া আশা আর থাকিতে পারিল না, চিঠিখানা ও জামাটা মেজের উপর ফেলিয়া দিয়া ডান হাতে থাটের থামটা ধরিয়া সেই হাতে মুখ লুকাইল । মহেন্দ্র বিদ্যুদবেগে চিঠিখানা তুলিয়া লইল । নিমেষের জন্য স্তব্ধ হইয়া আশার দিকে চাহিল। তাহার পরে আশা সিড়ি দিয়া মহেঞ্জের দ্রুতধাবনের শব্দ শুনিতে পাইল । তখন ধোবা ডাকিতেছে, "মা-ঠাকরুন, কাপড় দিতে আর কত দেরি করিবে । বেলা অনেক হইল, আমার বাড়ি তো এখানে নয় ।” NGNO রাজলক্ষ্মী আজ সকাল হইতে আর বিনোদিনীকে ডাকেন নাই । বিনোদিনী নিয়মমতে ভাড়ারে গেল, দেখিল, রাজলক্ষ্মী মুখ তুলিয়া চাহিলেন না। সে তাহা লক্ষ্য করিয়াও বলিল, “পিসিমা, তোমার অস্থখ করিয়াছে বুঝি । \Ցա( \Ֆ