পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি &e অভাব হইবে না। আর-একটি কথা আমি বলি মহিন, আমার মৃত্যুর পূর্বে কাহাকেও জানাসনে— আমার বাক্সে দু-হাজার টাকার নোট আছে, তাহা আমি বিনোদিনীকে দিলাম। সে বিধবা, একাকিনী, ইহার স্বদ হইতে তাহার বেশ চলিয়া যাইবে— কিন্তু মহিন, তাহাকে তোদের সংসারের ভিতরে রাথিসনে, তোর প্রতি আমার এই অনুরোধ রহিল !" * বিহারীকে ডাকিয়া রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “বাবা বিহারী, কাল মহিন বলিতেছিল, তুই গরিব ভদ্রলোকদের চিকিৎসার জন্য একটি বাগান করিয়াছিস- ভগবান তোকে দীর্ঘজীবী করিয়া গরিবের হিত করুন। আমার বিবাহের সময় আমার শ্বশুর আমাকে একখানি গ্রাম যৌতুক করিয়াছিলেন, সেই গ্রামখানি আমি তোকে দিলাম, তোর গরিবদের কাজে লাগাস, তাহাতে আমার শ্বশুরের পুণ্য হইবে।” 6.8 রাজলক্ষ্মীর মৃত্যু হইলে পর শ্রাদ্ধশেষে মহেন্দ্ৰ কহিল, “ভাই বিহারী, আমি ডাক্তারি জানি—তুমি যে-কাজ আরম্ভ করিয়াছ, আমাকেও তাহার মধ্যে নাও। চুনি যেরূপ গৃহিণী হইয়াছে সেও তোমার অনেক সহায়তা করিতে পারিবে । আমরা সকলে সেইখানেই থাকিব ।” বিহারী কহিল, “মহিনদা, ভালো করিয়া ভাবিয়া দেখো— এ-কাজ কি বরাবর তোমার ভালো লাগিবে ? বৈরাগ্যের ক্ষণিক উচ্ছ্বাসের মুখে একটা স্থায়ী ভার গ্রহণ করিয়া বসিয়ে না।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “বিহারী, তুমিও ভাবিয়া দেখো, ধে-জীবন আমি গঠন করিয়াছি, তাহাকে লইয়া আলস্যভরে আর উপভোগ করিবার জো নাই— কর্মের দ্বারা তাহাকে যদি টানিয়া লইয়া না চলি, তবে কোন দিন সে আমাকে টানিয়া অবসাদের মধ্যে ফেলিবে । তোমার কর্মের মধ্যে আমাকে স্থান দিতেই হইবে।” সেই কথাই স্থির হইয়া গেল । অন্নপূর্ণ ও বিহারী বসিয়া শান্ত বিষাদের সহিত সেকালের কথা আলোচনা করিতেছিলেন । র্তাহীদের পরম্পরের বিদায়ের সময় কাছে আসিয়াছে । বিনোদিনী দ্বারের কাছে আসিয়া কহিল, ”কাকীমা, আমি কি এখানে একটু বসিতে পারি ?” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “এসো এসো বাছ; বসে।” বিনোদিনী আসিয়া বসিলে তাহার সহিত দুই-চারিটা কথা কহিয়া বিছানা তুলিৰার উপলক্ষ্য করিয়া অন্নপূর্ণ বারান্দায় গেলেন।