পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় Se3S তো এ সমস্ত অপূর্ব জিনিল কখনো দেখেনি। সে ভাবলে, এগুলো কী, এর আবশুকতাই বা কী, এতে কী অভাব দূর হবে, দোকানদারের কাছে যাচিয়ে দেখলে এর কতই বা মূল্য হতে পারবে ! এক কথায়, এ বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, তত্ত্বজ্ঞান প্রভৃতি কিছুই নয় ; এ কেবল কতকগুলো রঙিন ভাবমাত্র, তারও ষে কোনটার কী নাম কী বিবরণ, তারও ভালো পরিচয় পাওয়া যায় না । ফলত, সমস্ত দিনের জালফেলা অগাধ সমূত্রের এই রত্বগুলি যাকে দেওয়া গেল সে বললে, এ আবার কী। জেলেরও মনে তখন অকুতাপ হল, সত্যি বটে, এ তো বিশেষ কিছু নয়, আমি কেবল জাল ফেলেছি আর তুলেছি ; আমি তো হাটেও যাইনি পয়সাকড়িও খরচ করিনি, এর জন্যে তো আমাকে কাউকে এক পয়সা খাজনা কিংবা মাশুল দিতে হয়নি । সে তখন কিঞ্চিৎ বিষন্নমুখে লজ্জিত ভাবে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে ঘরের স্বারে বসে একে একে রাস্তায় ফেলে দিলে । তার পরদিন সকালবেলায় পথিকরা এসে সেই বহুমূল্য জিনিসগুলি দেশে বিদেশে আপন আপন ঘরে নিয়ে গেল । বোধ হচ্ছে, এই কবিতাটি যিনি লিখেছেন তিনি মনে করছেন, তার গৃহকাৰ্যনিরতা অস্তঃপুরবাসিনী জন্মভূমি, তার সমসাময়িক পাঠকমণ্ডলী, তার কবিতাগুলির ঠিক ভাবগ্রহ করতে পারবে না,— তার যে কতখানি মূল্য সে তাদের জ্ঞানগোচর নয়,— অতএব এখনকার মতে এ-সমস্ত পথেই ফেলে দেওয়া যাচ্ছে, তোমরাও অবহেলা করে। আমিও অবহেলা করি, কিন্তু এ-রাত্রি যখন পোহাবে তখন ‘পস্টারিটি’ এসে এগুলি কুড়িয়ে নিয়ে দেশে বিদেশে চলে যাবে । কিন্তু তাতে ওই জেলে লোকটার মনের আক্ষেপ কি মিটবে। যাই হোক, পস্টগরিটি" ষে অভিসারিণী রমণীর মতো দীর্ঘরাত্রি ধরে ধীরে ধীরে কবির দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং হয়তো নিশিশেষে এসে উপস্থিত হতেও পারে, এ স্থখকল্পনাটুকু কবিকে ভোগ করতে দিতে কারো বোধ হয় আপত্তি না হতেও পারে । ‘দেউল' কবিতাটির সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্রে-সংকলিত উল্লিখিত চিঠিতেই বলিয়াছেন ঃ բ: * সেই মন্দিরের কবিতাটির ঠিক অর্থটা কী ভালো মনে পড়ছে না। বোধ হয় সেটা সত্যিকার মন্দির সম্বন্ধে । অর্থাৎ যখন কোণে বসে বসে কতকগুলো কৃত্রিম কল্পনার দ্বারা আপনার দেবতাকে আচ্ছন্ন করে