পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>QV。 রবীন্দ্র-রচনাবলী অভিভাবক । ব্যাকরণ মনে আছে ? মধুসূদন | আছে। অভিভাবক। ‘কর্তা কী, তার একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও দেখি । মধুসূদন | আজ্ঞে, কর্তা ও পাড়ার জয়মুনশি। অভিভাবক | কেন বলে দেখি । মধুসূদন । তিনি ক্রিয়া-কর্ম নিয়ে থাকেন। কালাচাঁদ । (সরোষে) তোমার মাথা ! পৃষ্ঠে বেত্ৰ মধুসূদন । (চমকিয়া) আজ্ঞে, মাথা নয়, ওটা পিঠ । অভিভাবক। ষষ্ঠী-তৎপুরুষ কাকে বলে ? মধুসূদন । জানি নে । মধুসূদন। ওটা বিলক্ষণ জানি— ওটা যষ্টি-তৎপুরুষ। অভিভাবকের হাস্য এবং কালাচান্দবাবুর তদৃবিপরীত ভাব অভিভাবক । অঙ্কশিক্ষা হয়েছে ? মধুসূদন । হয়েছে। ভভাবক। আচ্ছা, তোমাকে সাড়ে ছটা সন্দেশ দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে যে, পাচ মিনিট সন্দেশ খেয়ে যতটা সন্দেশ বাকি থাকবে তোমার ছোটো ভাইকে দিতে হবে । একটা সন্দেশ খেতে তোমার দু মিনিট লাগে, কটা সন্দেশ তুমি তোমার ভাইকে দেবে ? মধুসূদন । একটাও নয় । কালাচাঁদ । কেমন করে ! মধুসূদন। সবগুলো খেয়ে ফেলব। দিতে পারব না । অভিভাবক। আচ্ছা, একটা বটগাছ। যদি প্রত্যহ সিকি ইঞ্চি করে উচু হয় তবে যে বট এ বৈশাখ মাসের পয়লা দশ ইঞ্চি ছিল ফিরে বৈশাখ মাসের পয়লা সে কতটা উচু হবে ? মধুসূদন। যদি সে গাছ বেঁকে যায় তা হলে ঠিক বলতে পারি নে, যদি বরাবর সিধে ওঠে তা হলে মেপে দেখলেই ঠাহর হবে, আর যদি ইতিমধ্যে শুকিয়ে যায় তা হলে তো কথাই নেই। কালাচাঁদ । মার না খেলে তোমার বুদ্ধি খোলে না !! লক্ষ্মীছাড়া, মেরে তোমার পিঠ লাল করব, তবে তুমি সিধে হবে। মধুসূদন | আজ্ঞে, মারের চােটে খুব সিধে জিনিসও বেঁকে যায়। অভিভাবক। কালাচান্দবাবু, ওটা আপনার ভ্রম | মারপিট করে খুব অল্প কাজই হয়। কথা আছে। গাধাকে পিটােলে ঘোড়া হয় না, কিন্তু অনেক সময়ে ঘোড়াকে পিটােলে গাধা হয়ে যায়। অধিকাংশ ছেলে শিখতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ মাস্টার শেখাতে পারে না । কিন্তু মার খেয়ে মরে ছেলেটাই | আপনি আপনার বেত নিয়ে প্রস্থান করুন, দিনকতক মধুসূদনের পিঠ জুড়োক, তার পরে আমিই ওকে পডাব । মধুসূদন । (স্বগত) আঃ, বাচা গেল । কালাচাঁদ । বাচা গেল মশায় ! এ ছেলেকে পড়ানো মজুরের কর্ম, কেবলমাত্র ম্যানুয়েল লেবার ত্ৰিশ দিন একটা ছেলেকে কুপিয়ে আমি পাঁচটি মাত্র টাকা পাই, সেই মেহনতে মাটি কোপাতে পারলে নিদেন দশটা টাকাও হয় । শ্রাবণ ১২৯২