পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नौकाफूदि S8S করাইতে পারিব না । যোগেন্দ্র । কাহাকেও প্রশ্নোত্তর করিবার কোনো প্রয়োজন নাই। যাহা জানিবার জানিয়াছি। প্রমাণ যথেষ্ট হইয়াছে। এখন তোমাকে আমি স্পষ্টই বলিতেছি- ইহার পরে আমাদের বাড়িতে যদি প্রবেশের চেষ্টা কর, তবে তোমাকে অপমানিত হইতে হইবে । রমেশ পাংশুবর্ণমুখে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। i যোগেন্দ্ৰ কহিল, “আর-একটি কথা আছে, হেমকে তুমি চিঠি লিখিতে পরিবে না- তাহার সঙ্গে প্রকাশ্যে বা গোপনে তোমার সুদূর সম্পর্কও থাকিবে না। যদি চিঠি লেখ, তবে যে কথা তুমি গোপন রাখিতে চাহিতেছ। সেই কথা আমি সমস্ত প্রমাণের সহিত সর্বসাধারণের কাছে প্ৰকাশ করিব । এখন যদি কেহ আমাদের জিজ্ঞাসা করে তোমার সঙ্গে হেমের বিবাহ কেন ভাঙিয়া গেল, আমি বলিব এ বিবাহে আমার সম্মতি নাই বলিয়া ভাঙিয়া দিয়াছি- ভিতরকার কথাটা বলিব না। কিন্তু তুমি যদি সাবধান না হও, তবে সমস্ত কথা বাহির হইয়া যাইবে । তুমি এমন পাষণ্ডের মতো ব্যবহার করিয়াছ, তবু যে আমি আপনাকে দমন করিয়া রাখিয়াছি সে তোমার উপরে দয়া করিয়া নহে- ইহার মধ্যে আমার বােন হেমের সংস্রব আছে বলিয়াই তুমি এত সহজে নিষ্কৃতি পাইলে । এখন তোমার কাছে আমার এই শেষ বক্তব্য যে, কোনোকালে হেমের সঙ্গে তোমার যে কোনো পরিচয় ছিল, তোমার } কথায়-বার্তায় বা ব্যবহারে তাহার যেন কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়। এ সম্বন্ধে তোমাকে সত্যু করাইয়া লইতে পারিলাম না, কারণ, এত মিথ্যার পরে সত্য তোমার মুখে মানাইবে না। তবে এখনো যদি লজ্জা থাকে, অপমানের ভয় থাকে, তবে আমার এই কথাটা ভ্ৰমেও অবহেলা করিয়াে না।” অক্ষয় । আহা, যোগেন, আর কেন ? রমেশবাবু নিরুত্তর হইয়া আছেন, তবু তোমার মনে একটু দয়া হইতেছে না ? এইবার চলো। রমেশবাবু, কিছু মনে করিবেন না, আমরা এখন আসি । যোগেন্দ্র-অক্ষয় চলিয়া গেল। রমেশ কাঠের মূর্তির মতো কঠিন হইয়া বসিয়া রহিল। হতবুদ্ধি-ভাবটা কাটিয়া গেলে তাহার ইচ্ছা করিতে লাগিল, বাসা হইতে বাহির হইয়া গিয়া দ্রুতবেগে পদচারণা করিতে করিতে সমস্ত অবস্থাটা একবার ভাবিয়া লয়। কিন্তু তাহার মনে পড়িয়া গেল কমলা আছে, তাহাকে বাসায় একলা ফেলিয়া রাখিয়া যাওয়া যায় না । রমেশ পাশের ঘরে গিয়া দেখিল, কমলা রাস্তার দিকের জানালার একটা খড়খড়ি খুলিয়া চুপ করিয়া পুষ্প আছে। মেশের পশব্দ শুনিয়া সে খলখড়ি বদ্ধ কৰিয়া মুখ ফিরাইল। রমেশ মেজের উপর কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “উহারা দুজনে কে ? আজ সকালে আমাদের ইস্কুলে গিয়াছিল।” কমলা কহিল, “ই । উহারা তোমাকে কী বলিতেছিল ?” রমেশ কহিল, “আমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছিল তুমি আমার কে হও ?” কমলা যদিও শ্বশুরবাড়ির অনুশাসনের অভাবে এখনো লজ্জা করিতে শেখে নাই, তবু আশৈশব-সংস্কার-বশে রমেশের এই কথায় তাহার মুখ রাঙা হইয়া উঠিল। রমেশ কহিল, “আমি উহাদিগকে উত্তর করিয়াছি, তুমি আমার কেউ হও না।” কমলা ভাবিল, রমেশ তাহাকে অন্যায় লজ্জা দিয়া উৎপীড়ন করিতেছে। সে মুখ ফিরাইয়া তৰ্জনস্বরে কহিল, “যাও !” রমেশ ভাবিতে লাগিল, "কমলার কাছে সকল কথা কেমন করিয়া খুলিয়া বলিব।’ কমলা হঠাৎ ব্যস্ত হইয়া উঠিল। কহিল, “ঐ যা, তোমার ফল কাকে লইয়া যাইতেছে।” বলিয়া সে তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে গিয়া কাক তাড়াইয়া ফলের থালা লইয়া আসিল । রমেশের সম্মুখে থালা রাখিয়া কহিল, “তুমি খাইবে না ?” রমেশের আর আহারের উৎসাহ ছিল না, কিন্তু কমলার এই যত্নটুকু তাহার হৃদয় স্পর্শ করিল। সে কহিল, “কমলা, তুমি খাবে না ?”