পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(नेोकाश्रुति \OOG জড়াইয়া পড়িব । অক্ষয়। ভাই, তোমরা নিজের দোষে পুড়িয়াছ, আজকে সিঁদুরে মেঘ দেখিয়া আতঙ্ক লাগিতেছে। মেশ সম্বন্ধে তোমরা যে গোড়াগুড়ি একেবারে অন্ধ ছিলে। এমন ছেলে আর হয় না, ছলনা কাহাকে বলে রমেশ তাহা জানে না, দর্শনশাস্ত্রে রমেশ দ্বিতীয় শংকরাচার্য বলিলেই হয়, আর সাহিত্যে স্বয়ং সরস্বতীর উনবিংশ শতাব্দীর পুরুষ-সংস্করণ। রমেশকে প্রথম হইতেই আমার ভালো লাগে নাইইরকম অত্যচ্চ-আদর্শ-ওয়ালা লোক আমার বয়সে আমি ঢের-ঢের দেখিয়ছি। কিন্তু আমার কথাটি কহিবার জো ছিল না ; তোমরা জানিতে, আমার মতো অযোগ্য, অভাজন কেবল মহাত্মা-লোকদের ঈর্ষা করিতেই জানে, আমাদের আর কোনো ক্ষমতা নাই। যা হােক, এতদিন পরে বুঝিয়াছ মহাপুরুষদের দূর হইতে ভক্তি করা চলে, কিন্তু তঁহাদের সঙ্গে নিজের বােনের বিবাহের সম্বন্ধ করা নিরাপদ নহে। কিন্তু কণ্টকেনৈব কণ্টকম। যখন এই একটিমাত্র উপায় আছে, তখন আর এ লইয়া খুঁত খুঁত করিতে বসিয়াে না। যোগেন্দ্র। দেখো অক্ষয়, তুমি যে আমাদের সকলের আগে রমেশকে চিনিতে পারিয়াছিলে, এ কথা হাজার বলিলেও আমি বিশ্বাস করিব না। তখন নিতান্ত গায়ের জ্বালায় তুমি রমেশকে দু চক্ষে দেখিতে পারিতে না ; সেটা যে তোমার অসাধারণ বুদ্ধির পরিচয় তাহা আমি মানিব না। যাই হােক, কলাকৌশলের যদি প্রয়োজন থাকে। তবে তুমি লাগো, আমার দ্বারা হইবে না। মোটের উপরে, নলিনাক্ষকে আমার ভালোই লাগিতেছে না । যোগেন্দ্র এবং অক্ষয় উভয়ে যখন অন্নদার চা খাইবার ঘরে আসিয়া পৌঁছিল, দেখিল, হেমনলিনী ঘরের অন্য দ্বারা দিয়া বাহির হইয়া যাইতেছে। অক্ষয় বুঝিল, হেমনলিনী তাহাদিগকে জানােলা দিয়া পথেই দেখিতে পাইয়াছিল। ঈষৎ একটু হাসিয়া সে অন্নদার কাছে আসিয়া বসিল। চায়ের পেয়ালা ভর্তি করিয়া লইয়া কহিল, “নলিনাক্ষবাবু যাহা বলেন একেবারে প্রাণের ভিতর হইতে বলেন, সেইজন্য তাহার কথাগুলা এত সহজে প্ৰাণের মধ্যে গিয়া প্ৰবেশ করে ।” অন্নদাবাবু কহিলেন, “লোকটির ক্ষমতা আছে।” অক্ষয় কহিল, “শুধু ক্ষমতা ! এমন সাধুচরিত্রের লোক দেখা যায় না।” যোগেন্দ্ৰ যদিও চক্রান্তের মধ্যে ছিল তবু সে থাকিতে না পারিয়া বলিয়া উঠিল, “আঃ, সাধুচরিত্রের কথা আর বলিয়ে না ; সাধুসঙ্গ হইতে ভগবান আমাদিগকে পরিত্রণ করুন।” যোগেন্দ্ৰ কাল এই নলিনাক্ষের সাধুতার অজস্র প্রশংসা করিয়াছিল, এবং যাহারা নলিনাক্ষের বিরুদ্ধে কথা কহে তাহাদিগকে নিন্দুক বলিয়া গালি দিয়াছিল। অন্নদা কহিলেন, “ছি যোগেন্দ্ৰ, অমন কথা বলিয়ে না। বাহির হইতে র্যাহাদিগকে ভালো বলিয়া মনে হয়। অন্তরেও তাহারা ভালো, এ কথা বিশ্বাস করিয়া বরং আমি ঠকিতে রাজি আছি, তবু নিজের ক্ষুদ্ৰ বুদ্ধিমত্তার গীেরবরক্ষার জন্য সাধুতাকে সন্দেহ করিতে আমি প্রস্তুত নই। নলিনাক্ষবাবু যে-সব কথা বলিয়াছেন এ-সমস্ত পরের মুখের কথা নহে; তঁহার নিজের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার ভিতর ইহঁতে তিনি যাহা প্রকাশ করিয়াছেন আমার পক্ষে আজ তাঁহা নূতন লাভ বলিয়া মনে হইয়াছে। যে ব্যক্তি কপট সে ব্যক্তি সত্যকার জিনিস দিবে কোথা হইতে ? সোনা যেমন বানানো যায় না। এ-সব শুক্লািন বানানাে যায় না। আমার ইচ্ছ। ইয়াছেনলিনাক্ষবাবুকে আদি নিজে গিয়া সাধুবাদ দিয়া יין অক্ষয় কহিল, “আমার ভয় হয়, ইহার শরীর টেকে কি না ।” অন্নদীবাবু ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “কেন, ইহার শরীর কি ভালো নয় ?” অক্ষয় | ভালো থাকিবার তো কথা নয় ; দিনরাত্রি আপনার সাধনা এবং শাস্ত্রালোচনা লইয়াই আছেন, শরীরের প্রতি তো আর দৃষ্টি নাই। অন্নদী কহিলেন, “এটা ভারি অন্যায়। শরীর নষ্ট করিবার অধিকার আমাদের নাই ; আমরা আমাদের শরীর সৃষ্টি করি নাই। আমি যদি উহাকে কাছে পাইতাম তবে নিশ্চয়ই অল্পদিনেই আমি