পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীেকাডবি VO SRS A . হবে। অক্ষয় স্থির করিল, ইতিমধ্যে গাজিপুরে গিয়া সে সমস্ত সংবাদ জানিবে এবং তাহার পর একবার কাশীতে অন্নদাবাবুর সঙ্গে গিয়া দেখা করিয়া আসিবে । ) একদিন অগ্রহায়ণের অপরাহুে অক্ষয় তাহার ব্যাগ হাতে করিয়া গাজিপুরে আসিয়া উপস্থিত হইল । প্রথমে বাজারে জিজ্ঞাসা করিল, “রমেশবাবু বলিয়া একটি বাঙালি উকিলের বাসা কোন দিকে ?” খাতি নাই । তখন সে আদালতে গেল। আদালত তখন ভাঙিয়াছে। শামলা-পরা একটি বাঙালি একটি নূতন বাঙালি উকিল গাজিপুরে আসিয়াছেন, তাহার বাসা কোথায় জানেন ?” অক্ষয় ইহার কােছ হইতে খবর পাইল যে, রমেশ তো এতদিন খুড়ামশায়ের বাড়িতেই ছিল, এখন সে সেখানে আছে কি কোথাও গেছে তাহা বলা যায় না। তাহার স্ত্রীকে পাওয়া যাইতেছে না, সম্ভবত অক্ষয় খুড়ার বাড়িতে যাত্রা করিল। পথে যাইতে যাইতে ভাবিতে লাগিল, এইবার রমেশের চালটা বুঝা যাইতেছে। স্ত্রী মারা গিয়াছে ; এখন সে অসংকোচে হেমনলিনীর কাছে প্রমাণ করিবার চেষ্টা করবে, তাহার স্ত্রী কোনােকালেই ছিল না। হেমনলিনীর অবস্থা যেরূপ, তাহাতে রমেশের কথা গোপনে তাহারা যে কী ভয়ানক লোক অক্ষয় তাহা মনে মনে আলোচনা করিয়া নিজের প্রতি শ্রদ্ধা অনুভব করিতে লাগিল । খুড়ার কাছে গিয়া তাহাকে রমেশের ও কমলার কথা জিজ্ঞাসা করিবামাত্র তিনি শোক সংবরণ করিতে পারিলেন না, তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল । তিনি কহিলেন, “আপনি যখন রমেশবাবুর বিশেষ বন্ধু, তখন আমার মা কমলাকে নিশ্চয় আপনি আত্মীয়ের মতোই জানেন ; কিন্তু আমি এ কথা বলিতেছি, কয়েক দিন মাত্র তাহাকে দেখিয়া আমি আমার নিজের কন্যার সহিত তাহার প্রভেদ ভুলিয়া গেছি। দুদিনের জন্য মায়া বাড়াইয়া মা-লক্ষ্মী যে আমাকে এমন বজ্ৰাঘাত করিয়া ত্যাগ করিয়া যাইবেন, এ কি আমি জানিতাম ।” । অক্ষয় মুখ স্নান করিয়া কহিল, “এমন ঘটনাটা যে কী করিয়া ঘটিল, আমি তো কিছুই বুঝিতে পারি না | নিশ্চয়ই রমেশ কমলার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে নাই ।” খুড়া । আপনি রাগ করিবেন না, আপনাদের রমেশটিকে আমি আজ পর্যন্ত চিনিতে পারিলাম না । এ দিকে বাহিরে তো দিব্য লোকটি ; কিন্তু মনের মধ্যে কী ভাবেন, কী করেন, বুঝিবার জো নাই । নহিলে কমলার মতো আমন স্ত্রীকে কী মনে করিয়া যে অনাদর করিতেন তাহা ভাবিয়া পাওয়া যায় না । কমলা এমন সতীলক্ষ্মী, আমার মেয়ের সঙ্গে তার আপনি বােনের মতাে ভাব হইয়াছিল— তবু কখনাে একদিনের জন্যও নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে একটি কথাও কহে নাই। আমার মেয়ে মাঝে মাঝে বুঝিতে পারিত যে, সে মনের মধ্যে খুবই কষ্ট পাইতেছে, কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত একটি কথা বলাইতে পারে নাই। এমন স্ত্রী যে কী অসহ্য কষ্ট পাইলে এমন কাজ করিতে পারে তাহা তো আপনি বুঝিতেই পারেন— সে কথা মনে করিলেও বুক ফাটিয়া যায়। আবার আমার এমনি কপাল, আমি তখন এলাহাবাদে চলিয়া গিয়াছিলাম, নহিলে কি মা কখনো আমাকে ছাড়িয়া যাইতে পারিতেন ? পরদিন প্রাতে খুড়াকে লইয়া অক্ষয় রমেশের বাংলা ও গঙ্গার তীর ঘুরিয়া আসিল । ঘরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “দেখুন মশায়, কমলা যে গঙ্গায় ডুবিয়া আত্মহত্যা করিয়াছে, এ সম্বন্ধে আপনি যতটা নিঃসংশয় হইয়াছেন। আমি ততটা হইতে পারি নাই।” খুড়া । আপনি কিরাপ মনে করেন ? অক্ষয় । আমার মনে হয় তিনি গৃহ ছাড়িয়া চলিয়া গেছেন, তাহাকে ভালোরূপ খোজ করা উচিত। মৃত্যু হঠাৎ উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “আপনি ঠিক বলিয়াছেন, কথাটা নিতান্তই অসম্ভব "ן