পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(łR8 व्रतीक-द्रष्नांदळेी তোমার কাজ করতে দেবে ?” হরিমোহিনী কহিলেন, “কোন মা, তুমি যে ধর্ম মান সেই মতেই তুমি চলো— আমার জনো তোমাকে অন্য পথে যেতে হবে না। আমি তোমাকে কাছে পেয়েছি, বুকে রাখছি, প্রতিদিন দেখতে পাই, এই আমার আনন্দ। পরেশবাবু তোমার গুরু, তোমার বাপের মতো, তিনি তোমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তুমি সেই মেনে চলো, তাতেই ভগবান তোমার মঙ্গল করবেন।” হরিমোহিনী বরদাসুন্দরীর সমস্ত উপদ্রব এমন করিয়া সহিতে লাগিলেন যেন তাহা তিনি কিছুই বুঝিতে পারেন নাই। পরেশবাবু যখন প্রত্যহ আসিয়া তঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতেন- কেমন আছেন, কোনো অসুবিধা হইতেছে না তো— তিনি বলিতেন, “আমি খুব সুখে আছি।” কিন্তু বরদাসুন্দরীর সমস্ত অন্যায় সুচরিতাকে প্রতি মুহুর্তে জর্জরিত করিতে লাগিল। সে তো নালিশ করিবার মেয়ে নয় ; বিশেষত পারেশবাবুর কাছে বরদাসুন্দরীর ব্যবহারের কথা বলা তাহার দ্বারা কোনোমতেই ঘটিতে পারে না । সে নিঃশব্দে সমস্ত সহ্য করিতে লাগিল- এ সম্বন্ধে কোনোপ্রকার। আক্ষেপ প্ৰকাশ করিতেও তাহার অত্যন্ত সংকোচ বোধ হইত । ইহার ফল হইল। এই যে, সুচরিতা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণভাবেই তাহার মাসির কাছে আসিয়া পড়িল । মাসির বারংবার নিষেধ সত্ত্বেও আহার-পান সম্বন্ধে সে র্তাহারই সম্পূর্ণ অনুবতী হইয়া চলিতে লাগিল। শেষকালে সুচরিতার কষ্ট হইতেছে দেখিয়া দায়ে পড়িয়া হরিমোহিনীকে পুনরায় রন্ধনাদিতে মন দিতে হইল। সুচরিতা কহিল, “মাসি, তুমি আমাকে যেমন করে থাকতে বল আমি তেমনি করেই থাকিব, কিন্তু তোমার জল আমি নিজে তুলে দেব, সে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।” হরিমোহিনী কহিলেন, “মা, তুমি কিছুই মনে কোরো না, কিন্তু ঐ জলে যে আমার ঠাকুরের ভোগ হয় ।” সুচরিতা কহিল, “মাসি, তোমার ঠাকুরও কি জাত মানেন ? তাকেও কি পাপ লাগে ? তারও কি সমাজ আছে নাকি ?” অবশেষে একদিন সুচরিতার নিষ্ঠার কাছে হরিমোহিনীকে হার মানিতে হইল। সুচরিতার সেবা তিনি সম্পূর্ণভাবেই গ্রহণ করিলেন । সতীশও দিদির অনুকরণে “মাসির রান্না খাইব বলিয়া ধরিয়া পড়িল । এমনি করিয়া এই তিনটিতে মিলিয়া পরেশবাবুর ঘরের কোণে আর-একটি ছোটাে সংসার জমিয়া উঠিল। কেবল ললিতা এই দুটি সংসারের মাঝখানে সেতুস্বরূপে বিরাজ করিতে লাগিল । বরদাসুন্দরী তাহার আর-কোনো মেয়েকে এ দিকে ঘেষিতে দিতেন না— কিন্তু ললিতাকে নিষেধ করিয়া পারিয়া উঠিবার শক্তি র্তাহার ছিল না । \OS বরদাসুন্দরী তাহার ব্রাক্ষিকাবস্কৃদিগকে প্রায়ই নিমন্ত্ৰণ করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে তাহাদের ছাদের উপরেই সভা হইত । হরিমোহিনী তাহার স্বাভাবিক গ্ৰাম্য সরলতার সহিত মেয়েদের । আদর-অভ্যর্থনা করিতে চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ইহারা যে তঁহাকে অবজ্ঞা করে তাহা তাহার কাছে গোপন রহিল না। এমন-কি, হিন্দুদের সামাজিক আচার-ব্যবহার লইয়া তাহার সমক্ষেই বরদাসুন্দরী তীব্র সমালোচনা উত্থাপিত করিতেন এবং অনেক রমণী হরিমোহিনীর প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখিয়া সেই সমালোচনায় যোগ দিতেন । সুচরিতা তাহার মাসির কাছে থাকিয়া এ-সমস্ত আক্রমণ নীরবে সহ্য করিত ! কেবল, সেও যে তাহার মাসির দলে ইহাই সে যেন গায়ে পড়িয়া প্ৰকাশ করিতে চেষ্টা করিত। যেদিন আহারের আয়োজন থাকিত সেদিন সুচরিতাকে সকলে খাইতে ডাকিলে সে বলিত, “না, আমি খাই নে ৷” “সে কী ! তুমি বুঝি আমাদের সঙ্গে বসে খাবে না ।” t yy R | বরদাসুন্দরী বলিতেন, “আজকাল সুচরিতা যে মস্ত হিন্দু হয়ে উঠেছেন, তা বুঝি জান না ? উনি যে